দেওয়ান মাসুকুর রহমান, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) :
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. হরিপদ রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর ২০২৫) রাত ৮টার দিকে শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডস্থ জয়নগরপাড়া আবাসিক এলাকায় নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘ডেভিল হান্ট ফেজ-২ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
উল্লেখ্য যে, ডা. হরিপদ রায় মহোদয়ের মতো একজন চিরহরিৎ, গণমুখী, রম্যবাক, সজ্জন ও সর্বোপরি সেবাময় মনোদৃষ্টির মানুষের ধ্রুপদী মানসভুবন এবং বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শব্দবাক্যে সুবিন্যস্ত কিংবা বিচার-বন্দিশ করা দুরুহ ও কষ্টসাধ্য। অধিকন্তু
এই করোনাস্নাত সময়ে নিজ মন ও মনন যেখানে চলমান চক্রব্যূহে বিমূর্ত।
শ্রীমঙ্গল এতদ্বঞ্চলে সর্বজনীন ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় সর্বজনাব ডা. আব্দুল আলী, ডা. জিলানী, ডা. রমা রঞ্জন দেব, ডা. আব্দুল মালেক, ডা. রুহুল আমিন, ডা. শামসুল হক, ডা. সাধন চন্দ্র ঘোষ, ডা. প্রদীপ লাল বণিক মহোদয়ের মতো যে ক’জন প্রয়াত
ও জীবিত কিংবদন্তীতুল্য চিকিৎসক আস্থার স্থপতি এবং আশা-ভরসার প্রতীক রুপে গণমানুষের মনের মণিকোঠায় পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় অভিষিক্ত হয়েছেন, ডা. হরিপদ রায় মহোদয়ও তাঁদের মতোই নিজ মেধা, প্রজ্ঞা ও স্বাস্থ্যসেবায় সামন্তময় অবদানে ইতিমধ্যেই নির্মাণ করেছেন স্বতন্ত্র সড়কচিহ্ন -পথরেখা।
তিনি প্রথিতযশা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চপদে পদস্থ থাকলেও রক্ষণশীলতার তকমা তাঁর
জীবনে গরহাজির। কোন গণ্ডি বা ঘেরাটোপেও তাঁকে বৃত্তাবদ্ধ করতে দেখা যায় না। হাসপাতাল, চেম্বার, রুগী, অফিস অথবা শরীরবৃত্তীয় ভাবনার পাশাপাশি তাঁর মনন-মানস, চিন্তাস্রোত, বৈচিত্র্যময় ভাবপ্রক্ষেপণ সারস্বতসমাজে পরিব্যাপ্ত। তাইতো তিনি নিজেকে নিয়োজিত ও সদাব্যস্ত রাখেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মযজ্ঞে। আর এতদ্বসংক্রান্ত
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল শীর্ষপদে রেখেছেন সুনাম ও সাফল্যের স্বতন্ত্র সাক্ষর। অন্যদিকে একজন রম্যবাক ও বাগ্মী ব্যক্তিত্ব হিশেবেও তাঁর রয়েছে অতি সহজেই সবাইকে আপণ করে নেবার মতো প্রকৃতপ্রদত্ত আশ্চর্য যাদুকরী ক্ষমতা। সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর যে সহজাত বৈশিষ্ট্য মাধুর্য জনমনের সুদৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম – সেটা সারল্য। কৃত্রিমতার কূটাভাসে আকীর্ণ নন তিনি। করাঙ্গী, খোয়াই, কুশিয়ারা, মনু, ধলাইয়ের ধ্বনিতরঙ্গের মতোই তিনি আছেন সন্তর্পণে মানুষের
অন্তরের আঙিনায়।
হবিগঞ্জ শহরে শৈশব ও পড়ালেখার প্রথম পাঠ সম্পন্ন হলেও জেলার বাহুবলের এক আলোকিত গ্রাম খাগাউড়ায় ডা. হরিপদ রায় মহোদয়ের জন্ম।
উল্লেখ্য, এই গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছেন কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীসহ অনেক খ্যাতকৃতী ব্যক্তিত্ব। যাঁরা কর্মগুণে নিজেকে ও নিজ নিকেতনকে নিয়ে গেছেন অনন্য অভিজাত উচ্চতায়। তিনি নিভৃত হাওরের জল-জোছনায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা ডা. রায় মহোদয় সততই একজন শেকড় সন্ধানী। তাইতো নানা ছুতোয় ছুটে যান বাস্তুভিটায়। আত্মনিয়োগ করেন নিজপাটের
নানা সেবামূলক সামাজিক কর্মকাণ্ডে। তাঁর সুযোগ্য দুই সন্তানও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনসেবার মহত্তম মানসে চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। শ্রদ্ধেয় ডা. হরিপদ রায় মহোদয়ের একান্ত সান্নিধ্যে আসার অথবা তাঁর সঙ্গতার মাধুরীর সুযোগ এবং সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে আমি তাঁকে দূর থেকে দেখি নমিতনেত্রে শ্রদ্ধা ও মুগ্ধতার অতল অবগাহনে।
আমি তাঁর তাবৎ নায়কত্ব ও নান্দনিকতার একজন মুগ্ধ পদাতিক। করোনা সংকটে একজন ফ্রন্ট ফাইটার হিশেবে তিনি প্রশংসিত। যদিও হাতেগোনা কিছু স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টের জন্য শুধু এই করোনাকালেই না সর্বদাই স্বাস্থ্যসেবা প্রশ্নবিদ্ধ বা বিতর্কিত থাকে। যদিও সে বিষয়ে এখানে কিছু বলা বাহুল্যমাত্র!

