যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পাবদা মাছের রপ্তানি বেড়েছে, তবে বিপরীতে ভারত থেকে কার্প ও সামুদ্রিক মাছের আমদানি কমেছে। রপ্তানি বেড়লেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে স্থানীয় মাছচাষিরা চাপের মুখে পড়েছেন।
স্থানীয় মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৯০ কেজি মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যার মূল্য ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে পাবদা মাছের অংশ সবচেয়ে বেশি, মোট রপ্তানির ৮৮ শতাংশ। ইলিশের অংশ ছিল প্রায় ৪ শতাংশ। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৮২ লাখ ৯২ হাজার ৫৫০ কেজি মাছ, যার মূল্য ২ কোটি ৫৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭৫ ডলার। তখনও রপ্তানির বড় অংশ ছিল পাবদা মাছ।
অন্যদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত থেকে মাছ আমদানি হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ৭০২ কেজি, যার মূল্য ৭৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯০ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি ছিল প্রায় দ্বিগুণ, ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৬ হাজার ৮৮২ কেজি, যার মূল্য ১ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৩৫০ ডলার।
রপ্তানি বেড়লেও উৎপাদন খরচের কারণে স্থানীয় মাছচাষিরা চাপের মুখে। যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া এলাকার মাছচাষি হারুন অর রশিদ জানান, ৬০ একর জলাশয়ে পাবদা, তেলাপিয়া ও রুই মাছ চাষ করেন। তিনি বলেন, ‘মাছের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার এখন প্রায় দ্বিগুণ। মাছের খাদ্য, বিদ্যুৎ ও শ্রম খরচ বেড়ে গেছে। এখন ২ কেজি রুই মাছ উৎপাদনে খরচ পড়ে ২৭০–২৮০ টাকা, ফলে মুনাফা নেমে এসেছে ১০ শতাংশে, যা আগে ৩০ শতাংশের মতো ছিল।’
মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় মাছচাষিরা জানান, যশোর জেলার ঝিকরগাছা, মনিরামপুর ও শার্শা এলাকায় পাবদা মাছের উৎপাদন বেড়েছে। মূল কারণ ভারতে পাবদা মাছের চাহিদা বৃদ্ধি। এর ফলে চাষিরা রুই, কাতলা ও পাঙাশের চাষ কিছুটা কমিয়ে পাবদা চাষে ঝুঁকছেন।
চাষি হারুন অর রশিদ আরও জানান, তিনি সরাসরি রপ্তানি না করলেও তার কাছ থেকে পাবদা কিনে অনেকে ভারতে পাঠান। তিনি এখন মধ্যপ্রাচ্যে মাছ রপ্তানির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। ভারতে রপ্তানিকারক তারেক রহমান বলেন, ‘বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি পাবদা মাছ রপ্তানি করি। কেজিতে ১৫–১৬টি পাবদার চাহিদা বেশি।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের কোয়ারেন্টিন কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশের পাবদা মাছের চাহিদা বাড়ায় স্থানীয় উৎপাদন বেড়েছে। যশোর অঞ্চলে উৎপাদন উদ্বৃত্ত হওয়ায় আমদানির চাপ কমেছে। কিছু মাছ আখাউড়া সীমান্ত দিয়েও ভারতে যায়।