আনোয়ার শাহজাহান, লন্ডন:
“হরি লুট, লুটরে লুট!”—এটা কি কোনো আন্দোলনের স্লোগান? না, এটি এক অপসংস্কৃতির নগ্ন প্রকাশ। আজ সিলেটে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ব্যানারে যা ঘটেছে, তা ছিল চরম লজ্জার ও নৈতিক পতনের উদাহরণ। একটি মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আয়োজন করা হয়েছিল যেটি—তা কিছু বিবেকহীন মানুষের লোভের বলি হয়ে গেল।
দীর্ঘ এক যুগ ধরে আমি ও আমার পরিবার চেষ্টা করে যাচ্ছি ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের। বলব না শতভাগ পেরেছি, তবে চেষ্টা করেছি আন্তরিকভাবে। আমাদের কাছে এই বয়কট কেবল রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নয়, বরং একটি মানবিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা। অথচ আজ সেই পবিত্র চেতনার আড়ালে কিছু মানুষ ব্যাগভর্তি করে তুলে নিচ্ছে জুতা, খাবার আর অন্যান্য পণ্য। প্রশ্ন জাগে—এরা কারা? কোন মানসিকতা আর মূল্যবোধ নিয়ে চলছে এরা?
আমরা, বাংলাদেশিরা, এক বৈপরীত্যের জাতি—অসীম আবেগপ্রবণ, আবার দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাওয়া এক সমাজ। মুখে দেশপ্রেম ও ধর্মের কথা বলি, কিন্তু বাস্তবে আমাদের আচরণে তার প্রতিফলন কোথায়? এসব কর্মকাণ্ড কি সত্যিই আমাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, নাকি নিজেদের স্বার্থে ধর্মের আবরণ?
ধর্মীয় আবেগ কখনোই দুর্বৃত্তপনার ঢাল হতে পারে না। ধর্ম আমাদের শুদ্ধ হতে শেখায়, লুটেরা নয়। যারা সেদিন চুরি করেছে, তারা শুধু পণ্য নয়—চুরি করেছে একটি আন্দোলনের পবিত্রতা, একটি জাতির সম্মান।
সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ—সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে এই লুটকারীদের চিহ্নিত করা হোক এবং এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক, যা ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা হয়ে থাকবে। যাতে শুধু তারাই নয়, তাদের সন্তানরাও মনে রাখে—তাদের পিতা একদিন লুটপাটকারী ছিলেন।
আজ আমাদের প্রয়োজন আত্মসমালোচনা, অন্তর থেকে আত্মশুদ্ধি। লোভ নয়, বিবেক জাগুক; আবেগ নয়, গড়ে উঠুক ন্যায়ের দৃঢ় ভিত।
আনোয়ার শাহজাহান
সম্পাদক, আমাদের প্রতিদিন ও লন্ডন বিচিত্রা