চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় ‘গুপ্ত স্বৈরাচার’ ওৎ পেতে আছে বলে সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, দলের চূড়ান্ত একক প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে—অভ্যন্তরীণ বিরোধে না জড়িয়ে গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী শক্তির বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।
রোববার (২ নভেম্বর) রাতে গুলশানের হোটেল লেকশোরে প্রবাসে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যপদ গ্রহণের কর্মসূচি হিসেবে দলের ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এই পেমেন্ট গেটওয়ের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দলের কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত। সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমান বলেন,
“দল যাকে যে আসনে মনোনয়ন দেবে, তাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন। মনে রাখবেন, চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার ওৎ পেতে রয়েছে। নিজেদের মধ্যে রেষারেষি বা বিরোধ এমন পর্যায়ে নিতে পারবেন না, যাতে প্রতিপক্ষ সেই সুযোগ নেয়।”
তিনি জানান, খুব শিগগির পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
“ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন, জিতবে দেশ ও গণতন্ত্র,” — বলেন তিনি।
মনোনয়ন চূড়ান্তের পথে বিএনপি
তারেক রহমান জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত জানালে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে। সে লক্ষ্যে বিএনপি সারাদেশে তিনশ সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত করেছে।
“জনপ্রিয় দল হিসেবে বিএনপির প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকা স্বাভাবিক। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে—ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।”
তিনি আরও বলেন, রাজপথের শরিকদের মধ্য থেকেও প্রার্থী সমর্থন দেবে বিএনপি। তাই কিছু আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নাও পেতে পারেন—এটা নেতাকর্মীদের মেনে নিতে হবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে।
‘বিএনপির বিজয় ঠেকাতে আবারও চক্রান্ত চলছে’
তারেক রহমান বলেন,
“অতীতে পতিত ও পলাতক স্বৈরাচার বিএনপির বিজয় ঠেকাতে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। এখনো অপপ্রচার ও অপকৌশলের মাধ্যমে সেই চেষ্টার পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। তবে জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন নিয়ে জনগণের মনে সংশয় তৈরি হচ্ছে—এটি গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে সংকট ডেকে আনতে পারে।
প্রবাসী ভোট ও নারীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গেও বক্তব্য
প্রবাস থেকে ভোট দেওয়ার সুযোগ চালু করায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রবাসী ভোট প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হবে।
দেশে নারী নির্যাতনের উদ্বেগজনক বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
“নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ সমাজ গঠন শুধু সরকারের নয়, রাজনৈতিক দল হিসেবেও আমাদের দায়িত্ব।”
প্রযুক্তি ব্যবহারে জোর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,
“এখন যুদ্ধটা হচ্ছে সাইবার ওয়ার। জনসভা নয়, এখন ডিজিটালি মানুষের কাছে পৌঁছানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রযুক্তি দক্ষতা অর্জনের আহ্বান জানিয়ে বলেন,
“আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেভাবে আইটি প্রজেক্টে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেটিকে দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক জাহিদ হোসেনসহ দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

