যশোর প্রতিনিধি | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
যশোর শহরে এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে দুই পুরুষের মধ্যে প্রকাশ্যে দু’দফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক লজ্জা ও পারিবারিক টানাপোড়েনের এই নাটকীয় ঘটনাটি ঘটে শহরের চারখাম্বার মোড় এবং কোতোয়ালি থানার সামনে। পরে পুলিশ ওই নারীসহ উভয় পক্ষের দুই পুরুষকেই আটক করে আদালতে পাঠায়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তিনজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কী ঘটেছিল?
পুলিশ জানায়, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। জানা যায়, প্রথম পুরুষের সঙ্গে ওই নারীর দীর্ঘ ৩৬ বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল। তাঁদের সংসারে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে।
তবে পারিবারিক জীবনে নানান নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ওই নারী দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। একপর্যায়ে তিনি স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যান এবং অন্য একজন পুরুষের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে তাঁরা একসঙ্গে ভারতে চলে যান এবং সেখানে বিয়ে করেন।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে নবদম্পতি যশোরে ফিরে একটি হোটেলে ওঠেন। খবর পেয়ে প্রথম স্বামী দাবি করা ব্যক্তি সেখানে হাজির হন। সেখানেই প্রথমবার বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরদিন আবারও কোতোয়ালি থানার সামনেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কে কী বলছেন?
প্রথম স্বামী দাবি করা ব্যক্তি বলেন,
“সে আমার ৩৬ বছরের স্ত্রী। হুট করেই চলে গেল, সঙ্গে গয়না আর নগদ টাকাও নিয়ে গেছে। আমি চাই সে আমার ঘরে ফিরে আসুক। আমি ও আমার সন্তানরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।”
অন্যদিকে ওই নারী বলেন,
“আমি প্রথম স্বামীর সংসারে দিনের পর দিন নির্যাতন সয়েছি। কোনও সম্মান ছিল না। নতুন মানুষটির সঙ্গে আমি ভালো আছি এবং স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। আমি আর তার (প্রথম স্বামী) সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না।”
পুলিশ ও আদালতের অবস্থান
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল বলেন:
“তাদের থানা এনে দীর্ঘ সময় ধরে বোঝানো হয়েছে, কিন্তু কেউ ছাড় দিতে রাজি হয়নি। শেষমেশ তিনজনকেই দণ্ডবিধির ১৫১ ধারা অনুযায়ী (জনশৃঙ্খলা বিঘ্নের আশঙ্কায়) আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।”
আদালতে দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক রোকসানা খাতুন জানান,
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শান্তনু কুমার মন্ডল শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তিনজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি শহরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বলছেন, এটি শুধু পারিবারিক বা প্রেমঘটিত ঘটনা নয় — বরং সমাজে নারী অধিকার, সম্পর্কের জটিলতা এবং আইনি সুরক্ষার একটি বড় প্রশ্নও সামনে এনেছে।
একজন স্থানীয় সমাজকর্মী বলেন,
“এই ঘটনায় নারীটির সাহস ও অবস্থান স্পষ্ট হলেও, সমাজ এখনও নারীর নিজের সিদ্ধান্তকে সহজভাবে নিতে পারে না। আদালতের মাধ্যমে তাঁকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া জরুরি।”







