কান পরিষ্কারের সহজ উপায় ভেবে অনেকেই কটন বাড ব্যবহার করেন। কিন্তু এই অভ্যাসের ফলে ভয়াবহ পরিণতিও ডেকে আনতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, কটন বাড কেবল কানের কিছু ময়লা বাইরে আনে, আবার বেশির ভাগ ময়লা আরও ভেতরে ঠেলে দেয়। এর ফলে ব্লক, ব্যথা, কানে কম শোনা—এমনকি শ্রবণশক্তি হারানোর মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
মৃত্যুও ঘটতে পারে
কটন বাড ব্যবহার নিয়ে বিরল হলেও বিপজ্জনক ঘটনা ঘটেছে। ২০০৮ সালে কানাডার মন্ট্রিয়লের বাসিন্দা ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রতিদিন বারবার কটন বাড ব্যবহার করতেন। এর ফলে প্রথমে তাঁর বহিঃকর্ণে সংক্রমণ হয়। পরে তা মধ্যকর্ণ থেকে অন্তঃকর্ণে ছড়িয়ে মস্তিষ্কের আবরণ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। শেষ পর্যন্ত তিনি মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই ঘটনার পর দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ কটন বাডের প্যাকেটে সতর্কবাণী যোগ করার সুপারিশ করে।
কেন এত ঝুঁকি
মানবদেহে অন্তঃকর্ণ থেকে মস্তিষ্কের দূরত্ব কয়েক মিলিমিটার মাত্র। ফলে সামান্য সংক্রমণও সহজে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে মেনিনজাইটিস বা স্পাইনাল কর্ডের চারপাশে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। কটন বাড ব্যবহারে কানের ভেতরে আঘাত লেগে রক্তপাত, মাথা ঘোরা, বমিভাব, নার্ভের ক্ষতি, এমনকি মুখের পেশি পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে। অপরিচ্ছন্ন কটন বাড ব্যবহার করলে সংক্রমণ আরও মারাত্মক আকার নিতে পারে।
প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা
চিকিৎসকদের মতে, কানের ময়লা বা ওয়াক্স আসলে একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এটি কানকে ব্যাকটেরিয়া ও ধুলোবালি থেকে রক্ষা করে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই বেরিয়ে আসে। তাই নিয়মিত কটন বাড দিয়ে কান খোঁচাখুঁচি করার প্রয়োজন নেই। যদি কারও মনে হয় কানে ময়লা আটকে গেছে বা শুনতে সমস্যা হচ্ছে, তবে নিজে পরিষ্কার করার চেষ্টা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
নাক-কান-গলা বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা