হারিকেন মেলিসার ভয়াবহ আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি, ভেঙে পড়েছে অবকাঠামো, প্লাবিত হয়েছে অসংখ্য এলাকা। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এর মধ্যে শুধু হাইতিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন।
ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড় ১৭৪ বছরে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলে বর্ণনা করেছেন আবহাওয়াবিদরা। জ্যামাইকায় শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড় হিসেবে একে অভিহিত করা হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস বলেছেন, “মেলিসার প্রভাব ভয়ঙ্কর—এমন দুর্যোগ মোকাবিলার মতো প্রস্তুতি আমাদের নেই।”
জ্যামাইকার সরকার জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ধার ও জরুরি সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় অনলাইন পোর্টাল খোলা হয়েছে। তবে ভূমিধস ও বন্যার আশঙ্কা রয়ে গেছে, যা আরও বড় মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে।
এদিকে, হাইতিতে টানা ভারি বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। রাজধানী পোর্ট–অ–প্রিন্স থেকে ৬৪ কিলোমিটার পশ্চিমে পেটিট-গোয়াভ এলাকায় নদী উপচে পড়লে অন্তত ২৫ জন মারা যান, তাদের মধ্যে ১০ জন শিশু। এখনও ১২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
কিউবায়ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশটির সরকার সাত লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। বাহামা দ্বীপপুঞ্জেও প্রায় দেড় হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, বার্বাডোজে স্থাপিত ত্রাণ কেন্দ্র থেকে জামাইকার জন্য প্রায় ২ হাজার ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিউবা ও হাইতিতেও সহায়তা কার্যক্রম চালানোর প্রস্তুতি চলছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, সমুদ্রের অস্বাভাবিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মেলিসা অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চয় করে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তারা সতর্ক করেছেন, এটি শুধু জামাইকা নয়, সমগ্র ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য বড় মানবিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করছে।
বর্তমানে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। অনেক এলাকা এখনও পানির নিচে, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। জামাইকার প্রধানমন্ত্রী হোলনেসের ভাষায়, “পুরো দেশটাই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”







