ভারতের সংসদে ২০২৫ সালে পাস হওয়া ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে মুসলিম ধর্মীয় সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা অনেক মুসলিম সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতাদের মতে সংবিধান ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী।
মূল পরিবর্তনসমূহ:
- ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তি: নতুন আইনে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে বাধ্যতামূলকভাবে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিধান রয়েছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে ।
- ওয়াকফ সম্পত্তি নির্ধারণে জেলা প্রশাসকের ক্ষমতা বৃদ্ধি: জেলা কালেক্টরদের ওয়াকফ সম্পত্তি নির্ধারণ ও বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা মুসলিম শরিয়া আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে সমালোচিত হয়েছে ।
- ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের গঠন পরিবর্তন: ট্রাইব্যুনালে ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞদের পরিবর্তে জেলা আদালতের বিচারক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ধর্মীয় বিষয়ের বিচারিক স্বাধীনতা হ্রাস করতে পারে ।
- ওয়াকফ ঘোষণার জন্য ৫ বছরের মুসলিম পরিচয় বাধ্যতামূলক: কোনো ব্যক্তি ওয়াকফ সম্পত্তি ঘোষণা করতে চাইলে তাকে কমপক্ষে ৫ বছর ধরে মুসলিম হতে হবে, যা ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে সমালোচিত হয়েছে ।
সমালোচনা ও প্রতিবাদ:
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড, জামাত-ই-ইসলামী হিন্দ, ওয়েস্ট বেঙ্গল জমিয়ত-উল-উলামা সহ বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন এই আইনকে সংবিধানবিরোধী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার হরণকারী হিসেবে অভিহিত করেছে । এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ও কংগ্রেস এমপি মোহাম্মদ জাওয়েদ সুপ্রিম কোর্টে এই আইনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে তারা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন ।
সরকারের অবস্থান:
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই আইন ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং দুর্নীতি রোধ করবে। তারা দাবি করেছে, এই পরিবর্তনগুলি মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণে সহায়ক হবে ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
বাংলাদেশ শান্তির দল এই আইনকে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করে বিশ্ব নেতাদের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছে। তারা এই আইন বাতিলের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
এই বিতর্কিত আইন নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা ও উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে।