নিজ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতা, যা বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং নেতৃত্বের সংকটের একটি বড় ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ওই নেতা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দেশে আক্রমণ করে বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এখন আর মতামতের কোনও মূল্য নেই, চলছে একক আধিপত্যের রাজনীতি।
ভারতের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বিজেপির প্রবীণ নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে। তিনি প্রকাশ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেছেন। স্বামীর মতে, দেশজুড়ে অব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও সীমান্তে অবনত পরিস্থিতির দায় এই দুই নেতার ওপর বর্তায়। তার বক্তব্য, “যখন সরকার বারবার ব্যর্থ হয়, তখন নেতৃত্বে পরিবর্তন ছাড়া বিকল্প থাকে না।”
সুব্রহ্মণ্যম স্বামী আরও বলেন, বর্তমান বিজেপি নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের বদলে কেন্দ্রিকরণে বিশ্বাস করে, যা দল ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। যদিও দল থেকে এখনও তাঁকে বহিষ্কার করা হয়নি, তবে একাধিক বার তাঁর বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও, দলীয় মহলে তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
এমন সময় এই মন্তব্য এলো, যখন কাশ্মীর ইস্যু, বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপের মুখে পড়ে মোদি সরকার কঠিন সময় পার করছে। বিশ্লেষকদের মতে, স্বামীর এই বক্তব্য শুধু দলীয় নয়, বরং সামগ্রিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন লোকসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই জ্যেষ্ঠ নেতা অভিযোগ করেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখন আর গণতান্ত্রিক পরামর্শ বা ভিন্নমত গ্রহণ করে না। বরং, যাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের দল থেকে ধীরে ধীরে একঘরে করে রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমরা এক সময় যারা দল গড়ে তুলেছি, তাঁদের আজ গুরুত্ব নেই। একটা গোষ্ঠী পুরো দলকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যাদের মুখে দলীয় ঐক্যের কথা, তারাই আসলে বিরুদ্ধ মত দমন করছে।”
এই মন্তব্য ঘিরে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। বিশেষ করে, লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে এমন দ্বন্দ্বের প্রকাশ দলের ভাবমূর্তি এবং জনসমর্থনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে বিজেপির ভেতরের একটি অংশ।
এমন মন্তব্য শুধু যে বিজেপির অভ্যন্তরীণ সংকটকেই সামনে এনেছে তা নয়, বরং দেশজুড়ে বিরোধী দলগুলো এর রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে। কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো ইতোমধ্যেই এই মন্তব্যকে তুলে ধরে মোদি-শাহ জুটির ‘অগণতান্ত্রিক শাসননীতি’র বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের অসন্তোষ যদি আরও ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আসন্ন নির্বাচনেও তা বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।