যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ চুক্তি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী দেনিস শমিহাল। তাঁর ভাষ্যমতে, এই চুক্তি এখন আর কেবল একটি সহযোগিতা চুক্তি নয়—বরং এটি এক “বাস্তব অংশীদারিত্ব”-এ রূপ নিয়েছে, যেখানে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাও বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ইউক্রেনের অর্থনীতি মন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিডেনকো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে চুক্তির কারিগরি ও আর্থিক বিষয়াবলী নিয়ে চূড়ান্ত সমন্বয় করছেন। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই চুক্তি শুধুমাত্র খনিজ সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতার দিকেও প্রসারিত হবে, বিশেষ করে জ্বালানি নির্ভরতা ও ভবিষ্যতের পুনর্গঠন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে।
এই চুক্তি এমন এক সময়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, যখন ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দানে আবারও উত্তেজনা বেড়েছে। ইউক্রেনের সামরিক প্রধান ওলেক্সান্ডার সিরস্কি বলেন, রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনে তাদের আক্রমণের মাত্রা অনেক বেড়ে দিয়েছে, বিশেষ করে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে। সিরস্কি জানান, রুশ বাহিনী বর্তমানে প্রতিদিন বহুবার গোলাবর্ষণ করছে এবং ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
তবে একই সময়ে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দেন, তিনি ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার জন্য একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। এই সময়টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্রদের বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী হিসেবে পালন করা হবে। যদিও এই প্রস্তাবটি কূটনৈতিকভাবে একটি শান্তির বার্তা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, ইউক্রেন এই প্রস্তাবকে সন্দেহের চোখে দেখছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, “এই ধরনের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতিতে কোনো বাস্তব ফল আসে না। যদি সত্যিই রাশিয়া শান্তি চায়, তাহলে অন্তত ৩০ দিনের জন্য পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হোক।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা মানবিক সহায়তা ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সময় চাই, কিন্তু একান্তভাবে তা নির্ভর করে রাশিয়ার আন্তরিকতার ওপর।”
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় রুশ বাহিনীর হামলায় অন্তত ৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং আরও ৭০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে খারকিভ, জাপোরিঝিয়া এবং ডনবাস অঞ্চলের বিভিন্ন শহর। হাসপাতাল ও বাসস্থানসহ গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক স্থাপনাও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তিটি কেবল অর্থনৈতিক সহযোগিতা নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্বের কৌশলগত সমর্থনের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। এই অংশীদারিত্ব ইউক্রেনের যুদ্ধকালীন অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সহায়তা করতে পারে, বিশেষ করে দেশটির সমৃদ্ধ লিথিয়াম, টাইটেনিয়াম ও অন্যান্য দুর্লভ খনিজ সম্পদের মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকানোর পাশাপাশি ইউক্রেনের অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে স্বনির্ভর করার জন্য এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইউক্রেনের জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণের নতুন দ্বারও খুলে দিতে পারে।