ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সম্প্রতি এক টেলিভিশন ভাষণে ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তাদের “কুকুরের সন্তান” বলে উল্লেখ করে গাজা থেকে বাকি থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি হামাসের অস্ত্র ত্যাগ এবং গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা (PLO) ও বৈধ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (PA) হাতে তুলে দেওয়ার দাবিও জানান।
আব্বাস বলেন, “গাজার ওপর ইসরায়েলের যে গণহত্যা চলছে তা বন্ধ করা এখন সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু হামাসের হাতে জিম্মিরা ইসরায়েলের জন্য এক অজুহাতে পরিণত হয়েছে। সুতরাং, কুকুরের সন্তানরা, জিম্মিদের ছেড়ে দাও এবং ইসরায়েলকে অজুহাত দেওয়া বন্ধ করো।”
এই ভাষণ এমন এক সময়ে এসেছে যখন গাজায় চলমান সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মিসরও সম্প্রতি হামাসের নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও আব্বাস অতীতে হামাসের সমালোচনা করেছেন, তবে এই ভাষায় আক্রমণ আগে দেখা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, হামাসের কার্যক্রম “ফিলিস্তিনি জাতির উদ্দেশ্য ও আন্দোলনকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে” এবং ইসরায়েলকে “অপরাধ করার জন্য বিনামূল্যে অজুহাত সরবরাহ করেছে।” হামাসের ২০০৭ সালে গাজা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে আব্বাস ও তার দল ফাতাহর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বৈরী।
হামাস এক বিবৃতিতে আব্বাসের মন্তব্যের জবাবে তাকে “অযোগ্য” বলে অভিহিত করে জানায় যে, তিনি “বারবার ও সন্দেহজনকভাবে দখলদার শক্তির (ইসরায়েল) অপরাধের দায় আমাদের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।”
আব্বাস তার ভাষণে জাতিসংঘের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান এবং একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব করেন।
এছাড়া তিনি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে গাজা ও পশ্চিম তীরকে একত্রিত করার আহ্বান জানান, যেখানে হামাস রাজনৈতিক দলের রূপ নিয়ে অস্ত্র ছাড়বে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আইনের অধীনে কাজ করবে।
হামাস ও ফাতাহর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব বারবার ঐক্য প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করেছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে কায়রোতে একটি সমঝোতা হয়, কিন্তু বাস্তবায়নের আগেই তা ভেঙে পড়ে। এরপর ২০১৮ সালে গাজা সফরের সময় ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহর কনভয়ের ওপর বোমা হামলা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।
আব্বাসের বক্তব্য অনেকের মতে রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এটি একদিকে আন্তর্জাতিক মহলে তার অবস্থান শক্ত করতে পারে, অন্যদিকে হামাসের সঙ্গে ভবিষ্যতের ঐক্য সম্ভাবনাকে আরও দুরূহ করে তুলতে পারে।
ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত—যেখানে নেতৃত্বের মধ্যে ঐক্যের অভাব এবং গাজার চলমান যুদ্ধ একসঙ্গে ফিলিস্তিন সংকটকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। রাজনৈতিক সমাধান, মানবিক সুরক্ষা এবং জাতীয় ঐক্য এখন এই সংকট নিরসনের প্রধান চাবিকাঠি।