হোয়াইট হাউস বর্তমানে কাতারের রাজপরিবারের সঙ্গে একটি বিলাসবহুল বোয়িং 747-8 বিমান সাময়িকভাবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবহারের জন্য পাওয়া নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যবহৃত “এয়ার ফোর্স ওয়ান” হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে, যদিও এখনো এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কাতারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে এটি কোনো উপহার নয়, বরং “সাময়িক ব্যবহারের জন্য” দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। বিষয়টি বর্তমানে কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের মধ্যে আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে এবং উভয় পক্ষের আইনি বিভাগ এই প্রস্তাব মূল্যায়ন করছে।
এই ঘটনাটি এমন একটি সময়ে সামনে এলো যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় আন্তর্জাতিক সফরে কাতার সফরে যাচ্ছেন। ২০১৯ সালেও কাতার ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশাল পরিমাণে বিমান কেনার ঘোষণা দিয়েছিল। অতীতে কাতার তুরস্কের মতো দেশকে বিলাসবহুল ব্যক্তিগত বিমান উপহার দিয়েছে, ফলে এই ধরনের আলোচনার পেছনে কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট থাকাটাও অসম্ভব নয়।
সূত্র অনুযায়ী, যে বিমানটি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে সেটি বোয়িং 747-8 মডেলের—a একটি অত্যাধুনিক ও দীর্ঘ পাল্লার বিলাসবহুল বিমান, যা “flying palace” বা আকাশের রাজপ্রাসাদ নামেও পরিচিত। তবে এই বিমানটি এখনই প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত নয়। এটি নিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, এবং প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে ভেতরে বিশেষ যন্ত্রপাতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কমিউনিকেশন সিস্টেম বসাতে হবে।
বর্তমানে হোয়াইট হাউসের বহরে দুটি পুরনো বোয়িং 747-200B বিমান রয়েছে, যেগুলো ১৯৯০ এবং ১৯৯১ সাল থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল প্লেন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে বোয়িংয়ের সঙ্গে দুটি নতুন 747-8 বিমান নির্মাণের চুক্তি হলেও, কোম্পানিটি জানিয়েছে এই বিমান দুটি ২০২৭ বা ২০২৮ সালের আগে প্রস্তুত হবে না। ট্রাম্প সম্প্রতি এই বিলম্ব নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, “আমরা হয়তো একটি নতুন বিমান কিনব, বা কোনোভাবে একটি বিমান পাব।”
এদিকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, “বিদেশি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উপহার গ্রহণ করা হলে তা সম্পূর্ণ আইনি বিধান মেনে গ্রহণ করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসন সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” যদিও সরকার বলছে এটি উপহার নয়, বরং সাময়িক ব্যবহার, তবুও বিরোধীরা বলছে এত বড় আর্থিক মূল্যের একটি সম্পদ প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যবহার করা এবং পরবর্তীতে তাঁর লাইব্রেরিতে দান করার পরিকল্পনা আইনগত ও নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
জাতীয় আর্কাইভের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র রোনাল্ড রেগানের প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে একটি পুরনো এয়ার ফোর্স ওয়ান রয়েছে, যা সাতজন প্রেসিডেন্ট ব্যবহার করেছিলেন। তবে ট্রাম্পের লাইব্রেরির জন্য নতুন এবং বিলাসবহুল একটি বিমান দান করার বিষয়টি ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ব্যতিক্রম এবং বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনবিদ, নীতিনির্ধারক এবং নৈতিকতা বিশ্লেষকরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও তদন্ত ও প্রশ্ন তোলা হতে পারে।