ইতালির একটি সংশোধনাগারে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে চালু হল বিশেষ ‘মিলন কক্ষ’, যেখানে বন্দিরা বৈবাহিক সঙ্গী বা দীর্ঘদিনের সঙ্গীর সঙ্গে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার সুযোগ পাবেন। এই পদক্ষেপের ফলে দেশটির কারা ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ হল—প্রথমবারের মতো কারাবাসীদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখার অধিকার আইনি স্বীকৃতি পেল।
ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এক জেলে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে, তবে ইতিমধ্যে এটি নিয়ে গোটা দেশে আলোচনার ঝড় উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, বন্দিদের মানবাধিকার রক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সম্পর্কের টেকসই রক্ষার লক্ষ্যে এই বিশেষ কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য, যাঁরা দীর্ঘদিন প্রিয়জন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন, তাঁদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে এই উদ্যোগকে অত্যন্ত জরুরি মনে করছে প্রশাসন।
কীভাবে কাজ করবে এই ‘মিলন কক্ষ’?
এই কক্ষে প্রবেশাধিকার পাবেন শুধু সেই বন্দিরা, যাঁরা বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ বা বহুদিনের নিবন্ধিত সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন এবং জেলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন করছেন। মিলনের সময় নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল, কক্ষের দরজা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যাবে না, অর্থাৎ একরকম খোলা অবস্থাতেই রাখতে হবে। এই শর্তটি মূলত নিরাপত্তার স্বার্থে আরোপ করা হয়েছে যাতে কোনও ধরণের বেআইনি কর্মকাণ্ড না ঘটে।
সংশোধনাগারের কর্মীরা জানিয়েছেন, মিলন কক্ষগুলিতে ব্যক্তিগত পরিসর এবং যথেষ্ট গোপনীয়তা বজায় রাখা হবে, তবে কিছুটা নজরদারি চালু থাকবে। কোনো রকম জোর-জবরদস্তি, নিষিদ্ধ বস্তু বহন বা অপরাধমূলক কার্যকলাপ যাতে না হয়, সে জন্য কারা প্রশাসনের নজরদারি থাকবে সীমিত আকারে।
সমর্থন এবং সমালোচনা
এই উদ্যোগ ইতালির সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে ‘বন্দিদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং প্রগতিশীল পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শারীরিক ঘনিষ্ঠতা ও সম্পর্ক বজায় রাখার সুযোগ একদিকে যেমন মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, তেমনই কারাবাস শেষে সমাজে ফিরে যাওয়ার সময় একজন বন্দিকে আরও স্থিতিশীল করে তোলে।
অন্যদিকে, কিছু রাজনৈতিক দল এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁদের মতে, এটি জেলের শৃঙ্খলা নষ্ট করতে পারে এবং অপরাধীদের প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ।
ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি
এই প্রকল্প সফল হলে অন্যান্য সংশোধনাগারেও তা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ইউরোপের আরও কিছু দেশ ইতিমধ্যে অনুরূপ পাইলট প্রকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন, এটি শুধু একটি মানবিক উদ্যোগ নয়, বরং একটি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ—যার মাধ্যমে কারাবাসীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সম্ভব হতে পারে।
এই সিদ্ধান্ত সমাজে একটি বড় প্রশ্ন তুলছে—কারা একটি বন্দির মৌলিক চাহিদা এবং মানবিক অধিকার ঠিক করে? এবং সেই চাহিদাগুলি পূরণে রাষ্ট্র বা সমাজের ভূমিকা কতটা থাকা উচিত? সময় এবং অভিজ্ঞতা এর উত্তর দেবে, তবে আপাতত বলা যায়—ইতালির এই সাহসী পদক্ষেপ নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।