সত্যজিৎ দাস:
শারদীয় দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে শুধু একটি উৎসব নয়,এটি আত্মশুদ্ধি ও আত্মজাগরণের পথ। শাস্ত্রীয় মতে,পূজার মাধ্যমে মানুষ অন্তরের অশুভ প্রবৃত্তি দমন করে সত্য, সৌন্দর্য ও পবিত্রতার দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু কালের বিবর্তন ও আধুনিকতার প্রভাবে পূজার সেই বৈদিক সাত্ত্বিক ধারা থেকে সমাজ আজ অনেকটাই সরে গেছে,এমনই অভিযোগ তুলেছেন হিন্দু বিশ্লেষক ও ধর্মপ্রাণ ভক্তরা।
‘পূজা’ শব্দ উচ্চারণের সাথেই মন পবিত্র হয়ে ওঠে। যে স্থানে পূজা অনুষ্ঠিত হয়,তা হয়ে ওঠে দেবালয়সম। তাই পূজা মণ্ডপে স্থান ও মনের সমান পবিত্রতা অপরিহার্য। দেবী দুর্গা যেহেতু পরম বৈষ্ণবী,তাই অশালীন গান,মদ্যপান বা মাদকদ্রব্যের পরিবেশে তাঁকে আহ্বান করা সম্পূর্ণ শাস্ত্রবিরুদ্ধ। ভক্তদের দাবি,এসব কর্মকাণ্ড মায়ের ভক্তিপূর্ণ পূজাকে কলঙ্কিত করছে।
একসময় দুর্গোৎসব হতো সরল,সাত্ত্বিক এবং ভক্তিপূর্ণ পরিবেশে। প্রতিমা,মণ্ডপ ও প্রসাদ বিতরণ সবকিছুতেই ছিলো সংযম ও ধর্মীয় অনুশাসনের ছাপ। বর্তমানে অনেক জায়গায় পূজা পরিণত হয়েছে প্রতিযোগিতায়,কার মণ্ডপ কত দামী,কার প্রতিমা কত আধুনিক। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে ডিজে গান,অশালীন নৃত্য ও মদ্যপানের মতো অনৈতিক কার্যকলাপ। ফলে পূজা মণ্ডপে সাত্ত্বিকতা ম্লান হচ্ছে এবং সমাজে নেতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে।
সচেতন সনাতনীদের মতে,পূজা আনন্দের উৎসব হলেও তা ভক্তি ও শুদ্ধতার আনন্দ। কিন্তু আজ অনেকেই মনে করেন ডিজে গান,মদ্যপান বা উন্মাদ নৃত্য ছাড়া পূজা অসম্পূর্ণ। সত্যিকারের আনন্দ হলো মায়ের চরণে অঞ্জলি নিবেদন,ঢাকের তালে আরতি বা গীতাপাঠে অংশগ্রহণ করা। পূজাকে ক্লাব-পার্টিতে রূপান্তরিত করা ভক্তির পরিবর্তে ভোগবিলাসের প্রতিফলন।
পূজা মণ্ডপে সাত্ত্বিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে:
১) ভক্তিমূলক গান,ঢাকের তালে আরতি ও সংকীর্তন আয়োজন করা।
২) শিশু-কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন,কুইজ,শঙ্খ বা ঢাক বাজানোর মতো প্রতিযোগিতা রাখা।
৩) রাজনৈতিক প্রভাব ও বহিরাগত স্বার্থবাদী কর্মকাণ্ড থেকে পূজা মুক্ত রাখা।
৪) প্রতিমা যেন কোনো চলচ্চিত্র চরিত্র বা নায়িকার আদলে না হয়ে শাস্ত্রসম্মত ও ভক্তিপূর্ণ হয়।
৫) অশালীন পোশাক,ডিজে গান,মদ্যপান ও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার একেবারেই বর্জন করা।
দুর্গাপূজা শুধুই বাহ্যিক আড়ম্বর নয়,এটি আধ্যাত্মিক যাত্রা। শাস্ত্রীয় নিয়মে পূজা হলে সমাজ থেকে হানাহানি,বিদ্বেষ,দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দূর হবে। প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য,ভ্রাতৃত্ব ও প্রেম। সত্যিকারের দুর্গোৎসব তখনই সফল হবে,যখন প্রতিটি মণ্ডপ ভক্তি,শুদ্ধতা ও সাত্ত্বিকতায় আলোকিত হবে।
পূজার নামে তামসিকতা যদি চলতেই থাকে,তবে দেবী দুর্গার আশীর্বাদের পরিবর্তে অসন্তোষ ডেকে আনার ঝুঁকি রয়েছে। তাই মন্দির ও মণ্ডপে ভক্তি ও শুদ্ধতার পরিবেশ বজায় রাখা শুধু ধর্মীয় কর্তব্য নয়,এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সঠিক শিক্ষা পৌঁছে দেয়ারও দায়িত্ব।
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে তাই সকলকে আহ্বান জানানো হচ্ছে;সাত্ত্বিক পরিবেশ বজায় রেখে পূজা হোক ভক্তি,পবিত্রতা ও আত্মশুদ্ধির উৎসব।