সকালবেলা মর্নিং শিফটে অফিসের সময় এসে গেল, আপনি তখনো বিছানায় গভীর ঘুমে। অ্যালার্ম তিনবার বাজার পরও ধড়মড় করে উঠলেন। নাকে-মুখে সামান্য পানি ছিটিয়ে, দ্রুত বাস ধরতে ছুটলেন। কিন্তু তাড়াহুড়ার কারণে গোসলের সুযোগ পেলেন না।
ভাদ্রের তপ্ত রোদ আর ভ্যাপসা গরমে সিঁড়ি নামতেই ঘাম ঝরতে শুরু করল। রাস্তার মুড়ির টিন বাসে ওঠার পর গোটা শরীর চুটিয়ে ঘেমে গেল। অফিসে ঢুকেই হাত-মুখ না ধুয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে পড়লেন।
সহকর্মীরা শুধু চোখ কপালে তুলল না; বরং নাক চেপে ধরলেন। কারণ আপনার শরীর থেকে বের হচ্ছিল ঘামের তীব্র গন্ধ। কেউ সরাসরি কিছু বলেনি, কিন্তু সবাই দূরে থাকলেন। মনে মনে ভাবলেন, “লোকটা খুবই নোংরা, এত ভয়ানক গন্ধ কিভাবে সহ্য করা যায়?”
এই পরিস্থিতি সহজেই এড়ানো সম্ভব। অফিসে ঢুকার আগে ফ্রেশ হয়ে, হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করলে সবাই হয়তো বলতেন, “ভাই, আপনার পারফিউমটা দারুণ! কোন ব্র্যান্ড?” আর আপনি হাসিমুখে উত্তর দিতেন, “ধন্যবাদ, এটা আমার প্রিয় সুগন্ধি।”
সুগন্ধি শুধুই সামাজিক সৌজন্যের জন্য নয়, এটি একটি ধরনের আধ্যাত্মিক অভ্যাসও। নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অন্যের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করাই প্রকৃত রুচি।
নবীজি (সা.) সুগন্ধিকে অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৩,৯৩৯ অনুযায়ী, তিনি বলেছেন, “দুনিয়ার দুটি জিনিস আমার প্রিয় করা হয়েছে: স্ত্রী ও সুগন্ধি। আর আমার আত্মার প্রশান্তি নিহিত রয়েছে নামাজে।”
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর একটি আতরদানি ছিল, যা থেকে তিনি নিয়মিত সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,১৬২)
ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) বলেছেন, সুগন্ধি হলো আত্মার খোরাক এবং আত্মা হলো শক্তির বাহন। সুগন্ধি শক্তি বৃদ্ধি করে, মন, মস্তিষ্ক ও শরীর ভালো রাখে। ফেরেশতারা সুগন্ধি পছন্দ করেন, শয়তানদের পছন্দ দূষিত গন্ধ।
অতএব, সুগন্ধি ব্যবহার শুধুই সৌন্দর্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও সামাজিক পরিপূর্ণতার প্রতীক। প্রতিদিন একটু মনোযোগ—গোসল, পরিচ্ছন্ন পোশাক এবং সুগন্ধি—আপনার ব্যক্তিত্বকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।