গাজায় যুদ্ধ চলমান থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে ইসরায়েল। বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন—বর্ণবাদের সময়ের মতো কি ইসরায়েলও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ‘আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রে’ পরিণত হতে যাচ্ছে?
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯০ সালের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অবরোধের শিকার হয়েছিল। আজ ইসরায়েলও একই রকম আন্তর্জাতিক চাপের মুখে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে তার ভ্রমণ সীমিত হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম ও কানাডা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
বেলজিয়াম অবৈধ বসতি থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে এবং চরমপন্থী মন্ত্রী ও বসতিবাসীদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছে। স্পেন ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থায়ীভাবে বন্ধ করেছে ও যুদ্ধাপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নরওয়ে ২৩টি ইসরায়েলি কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বাণিজ্যিক চুক্তি আংশিক স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছে।
ইউরোভিশন প্রতিযোগিতা থেকে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার দাবি উঠেছে। হলিউডের চার হাজারের বেশি শিল্পী বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। স্পেনে সাইক্লিং টুর্নামেন্টে ইসরায়েলি দলের অংশগ্রহণের বিরোধিতা হয়েছে। দাবা প্রতিযোগিতায় পতাকা ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় ইসরায়েলি খেলোয়াড়রা খেলাই ছেড়ে দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু স্বীকার করেছেন, দেশ এখন অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে। তবে তিনি স্বনির্ভর শিল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছেন। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার স্পেনের নিষেধাজ্ঞাকে ‘ইহুদিবিদ্বেষমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বরাক ও এহুদ ওলমার্ট নেতানিয়াহুকে দায়ী করছেন ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করে ফেলার জন্য। সাবেক কূটনীতিক জেরেমি ইসাখারফ মনে করেন, পরিস্থিতি এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো হয়নি, তবে সেটি সামনে আসতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক অটুট থাকবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বাড়তে থাকলেও গাজা পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও ঐক্য প্রয়োজন।
ইসরায়েল তাই এখন এক দ্বিধামূলক পথে—আন্তর্জাতিক চাপ মেনে নীতির পরিবর্তন করবে, নাকি আরও একঘরে হয়ে আত্মনির্ভরতার দিকে যাবে, তা সময়ই বলে দেবে।