আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরানের রাজধানী তেহরানের নাগরিকদের শহর ছেড়ে যেতে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণকালে এবং পরে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, “সবার এখনই তেহরান ছেড়ে যাওয়া উচিত।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কিছু সময় পরই তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী সোমবার রাতে তেহরানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়, যার মধ্যে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনও রয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত পঞ্চম দিনের মতো চলতে থাকায় বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, তেহরানের জনগণকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্প ইরানকে চাপে ফেলতে চাইছেন, যাতে দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়।
জি-৭ সম্মেলনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমি ইরানকে ৬০ দিন সময় দিয়েছিলাম পরমাণু চুক্তিতে ফিরে আসার জন্য। আর ৬১তম দিনে কী হলো, তা আপনারা সবাই দেখেছেন।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই ইরান-ইসরায়েল চুক্তিতে পৌঁছাবে।
এরই মধ্যে হোয়াইট হাউজ সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প নির্ধারিত সময়ের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন। তবে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যোগ দেবে না।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, এটি শুধুমাত্র ‘সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের’ অংশ, কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নয়।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি মন্তব্য করেছেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে নিরস্ত করতে ওয়াশিংটন থেকে একটি ফোনকলই যথেষ্ট।”
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মিসাইল ও বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। সোমবার রাতে ইসরায়েল পশ্চিম ইরানের দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতেও হামলা চালিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কে তেহরান ছেড়ে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। শহরের বিভিন্ন সড়কে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট।
এছাড়া, ইসরায়েলে বসবাসকারী নাগরিকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস। এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলের নাগরিকরা যেন জর্ডানের স্থল সীমান্ত দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।”
চীনা দূতাবাসের মতে, ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং প্রাণহানিও বাড়ছে।
বিশ্ব সম্প্রদায় এখন তাকিয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট কীভাবে সমাধান হয় এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ কতটা সফল হয়।