বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক নোট ভারবাল পাঠিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার কয়েক দিন পর এই কূটনৈতিক বার্তা পাঠানো হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানো ভারতের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। পাশাপাশি সতর্ক করে বলা হয়—মানবতাবিরোধী جرمের জন্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়া হলে তা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকেই বিবৃতি ও বক্তব্য দিয়ে আসছেন। গত এক বছরে বাংলাদেশ একাধিকবার তার প্রত্যর্পণের অনুরোধ করলেও ভারত এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
আইসিটির রায় ঘোষণার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু জানায়, তারা রায়টি লক্ষ্য করেছে এবং বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে অবস্থান বজায় রাখবে। তবে প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে দিল্লি এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সীমিত ম্যান্ডেট থাকার কারণে ভারত এখনই বড় কোনো কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে না। তাদের মতে, বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই দিল্লি প্রত্যর্পণ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানাতে পারে।
ভারতে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে রাজনৈতিক আপত্তিও রয়েছে। অতীতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে দীর্ঘদিনের সমন্বয়ের কারণে দিল্লির জন্য একজন ঘনিষ্ঠ মিত্রকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি পাঠানো সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদিও দুই দেশের মধ্যে ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তি কার্যকর রয়েছে, ভারত চাইলে “রাজনৈতিক চরিত্রের অপরাধ” ধারা দেখিয়ে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। এমনকি ভারত যদি অনুরোধ গ্রহণও করে, তবে বিষয়টি যাবে আদালতে এবং সেখানে পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারত একটি সতর্ক কূটনৈতিক অবস্থান ধরে রাখবে। নির্বাচনী সময় ঘনিয়ে এলে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী বক্তব্য বাড়তে পারে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

