রনজিৎ বর্মন, (সাতক্ষীরা.প্রতিনিধি):
বাংলাদেশের উপকূলীয় নদ-নদীতে “চায়না দুয়ারি জাল”সহ ক্ষতিকর বিদেশি মাছ ধরার জাল ও পদ্ধতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে গ্রিণ কোয়ালিশন ও শ্যামনগরে সম্মিলিত যুব সংগঠনের আয়োজনে এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও এগ্রোইকোলজি ফান্ডের সহযোগিতায় স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়, কৃষক, পরিবেশবাদী, নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন যুব সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা হাতে নানা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে “চায়না দুয়ারি জাল বন্ধ করো”, “জলজ সম্পদ বাঁচাও, জেলের জীবন রক্ষা করো”, “দেশীয় মাছের বিলুপ্তি রোধ করো”—ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শ্যামনগর উপজেলা গ্রিণ কোয়ালিশন নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাংবাদিক শেখ আফজালুর রহমান এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রভাষক সামিউল আযম মনির, উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি গাজী আল ইমরান, সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সভাপতি বেলাল হোসেন, অনলাইন নিউজ ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মোমিনুর রহমান, বারসিক এর (ভারপ্রাপ্ত) আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, ঈশ্বরীপুর ইউপি সদস্য বীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, শ্যামনগর পৌরসভা গ্রীন কোয়ালিশনের সাধারন সম্পাদক কিরন শঙ্কর চ্যাটার্জী।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “চায়না দুয়ারি জাল” অত্যন্ত সূক্ষ্ম ফাঁসযুক্ত হওয়ায় এতে মাছের পোনা থেকে শুরু করে ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুকসহ প্রায় সব ধরনের জলজ প্রাণী আটকা পড়ে। ফলে মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, দেশীয় প্রজাতি বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে এবং ক্ষুদ্র জেলেরা জীবিকা হারাচ্ছেন। বক্তারা অবিলম্বে এই জালের আমদানি, বিক্রয় ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন ও লবণাক্ততার কারণে উপকূলীয় জনগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই সংকটে আছে। এর সঙ্গে ক্ষতিকর মাছ ধরার সরঞ্জাম যোগ হয়ে উপকূলের জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবন-জীবিকা এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।
মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মাননীয় উপদেষ্টা (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়) বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলে “চায়না দুয়ারি জাল”সহ সব ক্ষতিকর বিদেশি জাল নিষিদ্ধ করা, অবৈধ জাল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের বিকল্প জীবিকা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার নদী, খাল ও বিলগুলোতে এই জালের অবাধ ব্যবহার জলজ পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে। তাই দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন— জেলেখালী কৃষক নেতা দেবীরঞ্জন মন্ডল, কৈখালী আইসিএম কৃষক সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন গ্রীন কোয়ালিশনের সভাপতি ডা:যোগেশ মন্ডল, সোনামুুগারী জেলে কল্যান সমিতির সভাপতি গঙ্গারাম ধীবর, সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের সভাপতি সাইদুল ইসলাম, ইয়ুথ ফর সুন্দরবন এর আহ্বায়ক মুনতাকিমুল ইসলাম রুহানী, হাসানুর রহমান মুন্না, কৃষানী কোহিনুর বেগম প্রমূখ।
সহ স্থানীয় কৃষক, জেলে, এনজিও কর্মী, পরিবেশকর্মী, নারী প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার এই দাবিগুলো বিবেচনা করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, যাতে উপকূলীয় জলজ সম্পদ, জেলে সম্প্রদায়ের জীবিকা ও দেশের খাদ্যনিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বারসিক এর কর্মসূচী কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিলন।







