রনজিৎ বর্মন, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :
কৃষিজমিতে অতিমাত্রায় ব্যবহৃত ক্ষতিকর ও রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসের দাবিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় গ্রীন কোয়ালিশন, শ্যামনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবী এসোসিয়েশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে কৃষক, শিক্ষার্থী, নারীসংগঠক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গ্রীন কোয়ালিশন শ্যামনগর পৌরসভার উপদেষ্টা ও প্রেসক্লাবের সিনিয়র সাংবাদিক ইঞ্জিনিয়ার শেখ আফজালুর রহমান। তিনি বলেন, শ্যামনগরে কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার শুধু কৃষিকে নয়, মানুষের জীবনকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বিষের সহজলভ্যতা বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
বারসিক এর ককর্মসুচী কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিলনের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস.এম মোস্তফা কামাল, রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন আরাফাত, বারসিকের সহযোগী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, গ্রীন কোয়ালিশনের সাধারণ সম্পাদক কিরণ শংকর চ্যাটার্জী, ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের সভাপতি জিল্লুর রহমান, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সভাপতি ডাঃ যোগেশ মণ্ডল, শ্যামনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবী এসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুদ্দিন সিদ্দিক, সহ-সভাপতি মোমিনুর রহমান, শরুব ইয়ুথ টিমের ভলান্টিয়ার জেবা তাসনিয়া ও কৃষক দেবীরঞ্জন মণ্ডল প্রমুখ।
শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস.এম মোস্তফা কামাল বলেন, “ইতিপূর্বে বহু কৃষক কীটনাশক ছিটাতে গিয়ে অসুস্থ হয়েছেন। পুকুরের মাছ নষ্ট হয়েছে, গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে এগুলো বাস্তবতা। কৃষকের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে হলে কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।”
গ্রীন কোয়ালিশনের সাধারণ সম্পাদক কিরণ শংকর চ্যাটার্জী বলেন, “শ্যামনগরে কীটনাশক এতটাই সহজলভ্য যে কিশোর-কিশোরীরা পারিবারিক বা আত্মকলহের জেরে বিষক্রিয়ায় আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। এটি কেবল কৃষি নয়, একটি বড় সামাজিক সংকট।”
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবী এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মোমিনুর রহমান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের চাপে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর কীটনাশকের ক্ষতি যুক্ত হয়ে পুরো কৃষিপ্রণালী ভেঙে পড়ছে। বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতির প্রসার এখন জরুরি।”
বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার বলেন, “উপকূলীয় এলাকার মাটি ও পানি ইতোমধ্যে লবণাক্ততা ও দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত। অতিরিক্ত বিষ ব্যবহার এই সংকট আরও বাড়াচ্ছে। সমন্বিত পেস্ট ম্যানেজমেন্ট, জৈব কৃষি এবং কৃষক প্রশিক্ষণকে এখন গুরুত্ব দিতে হবে।”
ডাঃ যোগেশ মণ্ডল বলেন, “বিষক্রিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কৃষক, যুব ও পরিবারসবাইকে এই ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে সচেতনতা জরুরি।”
কৃষক দেবীরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “ক্ষতিকর কীটনাশকের কারণে মাঠে কাজ করতে ভয় লাগে। জৈব কৃষি হলে ঝুঁকি কমবে, খরচও কমে যাবে।”
বক্তারা ক্ষতিকর কীটনাশকের বিক্রি নিয়ন্ত্রণ, নিম্নমানের বিষের বাজারজাত বন্ধ, কৃষকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম নিশ্চিতকরণ, জৈব কৃষি প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি এবং বিষমুক্ত খাদ্যের অধিকারের নিশ্চয়তায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ জোরদারের দাবি জানান।
