অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি যে, আমাদের মোট আয়ুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটে বিছানায় ঘুমে, ঘুমের চেষ্টায়, বিশ্রাম কিংবা নেহাত শুয়ে-বসে। তাই বিছানার চাদর আরামদায়ক ও পরিষ্কার হওয়া জরুরি।
আর জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ সময় কাটানো নির্ভার আশ্রয়ের স্থানটি যদি রোগজীবাণুর ‘অভয়ারণ্য’ হয়ে থাকে, তাহলে স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রত্যাশা করা বোধ হয় অনুচিৎ। নিয়মিত বিছানার চাদর পরিষ্কার না করলে নানাভাবে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে পারে।
ঘুমের সময় আমাদের দেহ থেকে অসংখ্য মৃত ত্বককোষ ঝরে পড়ে। ঘাম ও ধুলাবালুর সঙ্গে মিশে বিছানার চাদরেই সেগুলো লেগে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মৃত ত্বককোষই ধুলাকীটদের প্রধান খাদ্য। তার মানে, যত দেরি করে আপনি বিছানার চাদর ধোবেন, চাদরে সেই ত্বককোষের পরিমাণও তত বাড়বে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে ধুলাকীটদের খাদ্যভান্ডার। এসব কীট অ্যালার্জি, হাঁচি, নাক বন্ধ বা হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ বাহক।
দীর্ঘদিন ধোয়া না হলে চাদরে বিভিন্ন ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধে। এসব জীবাণু শরীরের সংস্পর্শে এলে ঘটতে পারে সংক্রমণ। ঘাম, ধুলা ও জীবাণুতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকা চাদর ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি বা অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। ময়লা চাদরে ত্বকের তেল ও ব্যাকটেরিয়া জমে মুখ বা শরীরে ব্রণ ও ফুসকুড়ি হতে পারে।
আর্দ্রতা ও ময়লার কারণে চাদরে ছত্রাক জন্মাতে পারে, যা দুর্গন্ধ ও ফুসফুসের সমস্যা সৃষ্টি করে। নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাদর ঘুমের মান কমায়। আরামদায়ক ঘুম নষ্টের পাশাপাশি সৃষ্টি করতে পারে দীর্ঘমেয়াদি নিদ্রাহীনতা।
তাই সপ্তাহে একবার বিছানার চাদর পরিষ্কার করা উচিত। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই এ ব্যাপারে একমত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিচ্ছন্নতা–প্রযুক্তিবিষয়ক স্টার্টআপ কোম্পানি ‘ডার্টি ল্যাব’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ড. পিট হের মতে, সপ্তাহে একবার না হলেও ‘অন্তত দুই সপ্তাহে একবার’ অবশ্যই বিছানার চাদর ধোয়া উচিত। যুক্তরাজ্যের লেখক, মনোবিদ, স্নায়ুবিজ্ঞানী ও নিদ্রাবিশেষজ্ঞ ডা. লিন্ডসে ব্রাউনিংয়ের পরামর্শও মোটামুটি একই রকম।
পিট হে এই ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখার ব্যাপারে জোর পরামর্শ দিয়েছেন। তা হলো, আমাদের দেহ ও ত্বকের ধরন। অনেকের শরীর অনেক বেশি ঘামে। আবার কারও ত্বক একটু বেশি সংবেদনশীল কিংবা অ্যালার্জিপ্রবণ। যাদের এরূপ সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এক সপ্তাহের বেশি সময় না ধোয়া বিছানার চাদর ব্যবহার উচিত নয়।