ডা. মোঃ শাহিনুল ইসলাম
বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে শিশুদের অন্যতম সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলো কৃমি সংক্রমণ। এই সংক্রমণ শিশুর পুষ্টিহীনতা, দুর্বলতা এবং মানসিক মনোযোগে ঘাটতির অন্যতম কারণ হতে পারে। সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে এ সমস্যা সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।
কৃমি সংক্রমণের কারণ:
১. খাওয়ার আগে ও পায়খানার পর হাত না ধোয়া।
২. মাটি বা নোংরা পরিবেশে খেলা করা।
৩. অস্বচ্ছ বা অঢাকা খাবার খাওয়া।
৪. দূষিত পানি পান করা।
৫. বড়, অপরিষ্কার নখ—যা দিয়ে কৃমির ডিম সহজেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
লক্ষণসমূহ:
১. ঘন ঘন পেট ব্যথা বা পেট ফাঁপা।
২. ক্ষুধামান্দ্য বা খাওয়ার প্রতি অনীহা।
৩. ওজন কমে যাওয়া, দুর্বলতা ও চেহারায় খোশখোশে ভাব।
৪. রাতে দাঁত ঘষা, ঘুমে অস্থিরতা বা পায়খানার রাস্তায় চুলকানি।
৫. কখনো কখনো মলের সঙ্গে কৃমি দেখা যাওয়া।
চিকিৎসা ও প্রতিকার:
১. সরকারিভাবে বছরে দু’বার কৃমিনাশক ট্যাবলেট (আলবেনডাজল) খাওয়ানো হয়। ১ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রতিটি শিশুকে এটি খাওয়ানো জরুরি।
২. খাওয়ার আগে ও পায়খানার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৩. শিশুদের নখ ছোট ও পরিষ্কার রাখা এবং নখ কামড়ানো বন্ধ করতে হবে।
৪. সব খাবার ঢেকে রাখতে হবে ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. পায়খানা ব্যবহারের পর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা শেখাতে হবে শিশুকে।
উপসংহার:
কৃমি একটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রা ও সময়মতো কৃমিনাশক ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। শিশুর সুস্থ ও পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করতে অভিভাবকসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা জরুরি।
আসুন, কৃমিমুক্ত, সুস্থ ও শক্তিশালী আগামী প্রজন্ম গড়ে তুলি।
লেখক পরিচিতি:
ডা. মোঃ শাহিনুল ইসলাম
নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (শিশু)
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সালথা, ফরিদপুর।