বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ এবং প্রচণ্ড গরম থাকে। এ সময় অতিরিক্ত গরম, আদ্রতা ও ধুলাবালির কারণে শিশুরা সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গরমে শিশুর ঘামাচি, পানিশূন্যতা, হিট র্যাশ, হিট স্ট্রোক, খাদ্যে অরুচি এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই সচেতনভাবে যত্ন নিলে শিশুকে সুস্থ রাখা সম্ভব। নিচে গরমে শিশুর যত্নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
—
১. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাদ্য দিন:
শিশুকে বারবার পানি বা বুকের দুধ পান করান।
৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুকে ডাবের পানি, লেবু পানি ও ঘরের তৈরি ওআরএস দেওয়া যেতে পারে।
প্রস্রাবের রঙ হলুদ হলে বুঝতে হবে শিশুটি পানিশূন্যতায় ভুগছে।
২. হালকা ও সহজপাচ্য খাবার দিন:
খিচুড়ি, ভাত-ডাল, সবজি, কলা, তরমুজ ইত্যাদি উপকারী।
দুধ দ্রুত নষ্ট হয়, তাই সতর্কতা অবলম্বন করে সংরক্ষণ করুন।
বাইরের খাবার, ভাজাপোড়া ও পচনশীল খাবার থেকে দূরে রাখুন।
৩. সুতির হালকা জামা পরান:
হালকা রঙের, ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরানো ভালো।
ঘামে ভিজে গেলে জামা পাল্টে দিন।
৪. ঘর ঠাণ্ডা ও বাতাস চলাচল উপযোগী রাখুন:
জানালা খোলা রাখুন, পর্দা টানিয়ে রোদ আটকান।
ফ্যান চালু রাখুন এবং দিনে ১-২ বার হালকা গরম পানিতে গোসল করান বা গা মুছে দিন।
৫. ঘামাচি ও ত্বকের যত্ন নিন:
ঘামাচি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে লোশন বা পাউডার ব্যবহার করুন।
শিশুদের গা শুকনো রাখুন এবং বারবার পরিষ্কার জামা পরান।
৬. দুপুরের রোদে বাইরে যাওয়া বন্ধ করুন:
দুপুর ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
বাইরে যেতে হলে ছাতা, টুপি ও পানির বোতল সঙ্গে রাখুন।
৭. বিপদজনক লক্ষণ দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
খাওয়ার অরুচি, ঘন ঘন বমি, পাতলা পায়খানা
প্রস্রাব কমে যাওয়া বা ত্বক শুকিয়ে যাওয়া
শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বা দুর্বলতা
—
উপসংহার:
শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য প্রতিটি ঋতুতেই যত্ন জরুরি, তবে গরমকালে এটি আরও বেশি প্রয়োজন। সময়মতো তরল খাবার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে গরমে শিশুকে সুস্থ রাখা সম্ভব। সচেতন অভিভাবকরাই পারেন তাদের সন্তানদের গ্রীষ্মকালীন রোগ থেকে নিরাপদ রাখতে।
লেখক:
ডাঃ মোঃ শাহিনুল ইসলাম
নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (শিশু)
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা
সালথা, ফরিদপুর