রাতে ঘুম না এলে কিছু কাজ করা এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ সেগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং অনিদ্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। নিচে এমন কিছু কাজের তালিকা দেওয়া হলো, যা ঘুম না আসলে করা ঠিক নয়—
❌ যে কাজগুলো করা উচিত নয়:
- মোবাইল বা ল্যাপটপ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা – ফোন, ট্যাব, কম্পিউটার বা টিভির নীল আলো মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে তোলে, যা মেলাটোনিন (ঘুমের হরমোন) ক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
- ক্যাফেইনযুক্ত খাবার বা পানীয় খাওয়া – চা, কফি, এনার্জি ড্রিংক বা চকোলেটে থাকা ক্যাফেইন ঘুমের শত্রু। সন্ধ্যার পর এসব খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
- ধূমপান বা অ্যালকোহল পান করা – নিকোটিন ও অ্যালকোহল স্নায়ুকে উত্তেজিত করে, যা ঘুমের চক্র নষ্ট করতে পারে।
- কঠোর ব্যায়াম করা – রাতে ভারী ব্যায়াম করলে শরীর উত্তেজিত হয়ে যায়, যা ঘুমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া বা মানসিক চাপ নেওয়া – গভীর রাতে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় এমন কাজ করলে আরও বেশি চিন্তা হতে পারে, যা ঘুম আরও দেরি করিয়ে দেয়।
- অনেকক্ষণ বিছানায় শুয়ে জেগে থাকা – ঘুম না আসলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় গণনা না করে কিছুক্ষণ উঠে অন্য হালকা কাজ করা ভালো।
- অতিরিক্ত খাওয়া বা একদম না খাওয়া – রাতে অতিরিক্ত ভারী খাবার বা একেবারেই না খেলে হজমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
- উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে রাখা – ঘুমানোর আগে খুব বেশি আলো ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক ভাবতে পারে যে এটি দিনের সময়, ফলে ঘুম দেরি হতে পারে।
✅ যা করা যেতে পারে:
- বই পড়া (হালকা বিষয়, রহস্য বা থ্রিলার না)
- ধীর ও গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা
- মেডিটেশন বা মৃদু যোগব্যায়াম করা
- উষ্ণ গরম দুধ পান করা
- নরম সুরের মিউজিক শোনা
- রুম অন্ধকার ও শীতল রাখা
আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে কিছু অভ্যাস বদলানো দরকার হতে পারে। অনিদ্রা দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
ঘুমের সমস্যা কমানোর কিছু কার্যকর উপায়
🌙 ঘুমের রুটিন ঠিক করুন
✅ নিয়মিত একই সময়ে ঘুমাতে যান ও জাগ্রত হন – ছুটির দিনেও ঘুমের রুটিন বজায় রাখুন।
✅ ঘুমানোর ৩০-৬০ মিনিট আগে মোবাইল ও স্ক্রিন টাইম বন্ধ করুন – নীল আলো মস্তিষ্ককে জাগিয়ে রাখে।
✅ বিছানায় শুধু ঘুমানোর জন্য যান – বিছানায় বসে ফোন চালানো বা টিভি দেখা বন্ধ করুন।
🥗 খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করুন
✅ রাতে হালকা খাবার খান – ভারী খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করে, যা ঘুম নষ্ট করতে পারে।
✅ ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন – বিকেল ৫টার পর কফি, চা বা সফট ড্রিংক না খাওয়াই ভালো।
✅ উষ্ণ দুধ বা হার্বাল টি পান করুন – এতে মস্তিষ্ক শিথিল হয়।
🧘 ব্যায়াম ও রিল্যাক্সেশন
✅ সকালে বা বিকেলে ব্যায়াম করুন – কিন্তু রাতে বেশি ভারী ব্যায়াম করবেন না।
✅ মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন – স্ট্রেস কমাবে ও ঘুম সহজ করবে।
✅ হালকা স্ট্রেচিং বা ইয়োগা করুন – এতে শরীর রিল্যাক্স হবে।
🏡 ঘুমের পরিবেশ উন্নত করুন
✅ ঘর অন্ধকার ও শীতল রাখুন – খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা পরিবেশ ঘুমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
✅ নরম ও আরামদায়ক বিছানা ব্যবহার করুন – শক্ত বা খুব নরম বিছানা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
✅ নীরবতা বজায় রাখুন – সম্ভব হলে হালকা মিউজিক বা “white noise” ব্যবহার করতে পারেন।
🚨 চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, যদি:
❌ আপনার ঘুম না আসার সমস্যা ৩-৪ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়।
❌ রাত জেগে থাকার কারণে দিনের বেলা ক্লান্তি অনুভব করেন।
❌ ডিপ্রেশন, স্ট্রেস বা উদ্বেগজনিত সমস্যার কারণে ঘুম না হয়।
❌ বারবার ঘুম ভেঙে যায় এবং ঘুম আসতে দেরি হয়।
আপনার অনিদ্রার সমস্যাটা কতদিন ধরে চলছে? কোনো বিশেষ কারণ আছে বলে মনে হয়? 😴💤