সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে তাঁর ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় কঠোর সতর্কতা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন—আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে দলীয় নেতাকর্মীরা ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বন্ধ করে দেবে। তাঁর দাবি, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রভাবিত।
জয় জানিয়েছেন—আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রেখে কোনো ভোট আয়োজন করতে দেওয়া হবে না। তাঁর সতর্ক হুঁশিয়ারি, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে এবং সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা আছে।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা করবে, যা গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এর আগে জয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন—রায়ের বিষয়ে তারা ‘প্রায় নিশ্চিত’, এবং দোষী সাব্যস্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি দাবি করেন, তাঁর মা ভারতে নিরাপদে রয়েছেন এবং সেখানে তাঁকে “রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদা” অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর ভাষায়—ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছভাবে বিচার পরিচালনা করছে এবং কোনোভাবেই রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো পরিকল্পনা নেই, কারণ দলটি এখনো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেনি কিংবা জবাবদিহির প্রক্রিয়ায় ফেরার উদ্যোগ দেখায়নি। সরকারের অগ্রাধিকার—উত্তেজনা কমানো ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান। তিনি বরাবরই অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশব্যাপী বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হয় এবং অসংখ্য আহত হয়—যা স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় তৈরি পোশাক শিল্পসহ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকায় সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে—বহু ককটেল বিস্ফোরণ, বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ এবং সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন, চেকপোস্ট বাড়ানো এবং জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জয় দাবি করেন—তিনি ও তাঁর মা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং দেশজুড়ে বিরোধ আন্দোলন আরও বড় আকারে বিস্তৃত হবে।
দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রশংসা পেলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন, মতদমন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের অভিযোগও রয়েছে। এবার উল্টো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে—বহু আওয়ামী লীগ নেতা মামলা ও নিষেধাজ্ঞার মুখে, আর জয় বলেছেন তাঁরা “শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন”

