বলা হয়, সময় সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবে কি সত্যিই সব দুঃখ ও স্মৃতি সময়ের সঙ্গে ধুয়ে যায়? মানুষের জন্য ভুলে যাওয়া একটি স্বাভাবিক প্রবণতা; এটি আল্লাহর প্রদত্ত একটি অনবদ্য নিয়ামত। প্রিয়জনের হারানো বা কোনো ব্যথাজনক স্মৃতি যদি স্মৃতির কুন্ঠায় আটকে থাকত, তাহলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠত।
তবে বাস্তবতা হলো, সময় কষ্টকে সম্পূর্ণভাবে মুছে দেয় না; বরং তা সহনীয় করে তোলে। প্রাথমিকভাবে যা ভীষণ ব্যথা মনে হয়, সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে তা হালকা হয়ে যায়। প্রিয়জন হারানোর মতো কিছু কষ্ট কখনোই পুরোপুরি ভোলা যায় না, কিন্তু সময় আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখায়। নতুন অভিজ্ঞতা, পরিবর্তন ও ধৈর্য হৃদয়ের ক্ষতকে কোমল করে। স্মৃতিগুলো ঝাপসা হয়ে যায়, তীব্রতা কমে যায়, এবং একসময় তা মনের গভীরে শান্তিপূর্ণ স্মৃতি হিসেবে থেকে যায়।
অন্যায়ের কষ্ট সহজে ভোলা যায় না
যদি কষ্ট অন্যায়ভাবে আসে, তা সাধারণত সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। এমন কষ্ট কখনো কখনো গভীর ট্রমার রূপ নেয়। অন্যায়কারী প্রায়ই সহজেই ভুলে যায়, স্বাভাবিক জীবনযাপন করে, কিন্তু যিনি অন্যায়ের শিকার, তার জন্য তা ভুলে যাওয়া কঠিন।
মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, যখন কোনো কষ্টের কারণ বা ন্যায্যতা বোঝা যায় না, তখন মস্তিষ্ক বারবার সেই ঘটনার স্মৃতি পুনরাবৃত্তি করে। এটি রিউমিনেশন নামে পরিচিত, যা ব্যক্তিকে কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় না। এমন কষ্ট বিশ্বাসের সংকট তৈরি করতে পারে। এই অবস্থায় গ্রহণযোগ্যতা (acceptance) এবং ক্ষমার (forgiveness) চর্চা সহায়ক হতে পারে। তবে ক্ষমা সবসময় সহজ নয়, কখনো পরিস্থিতি তা অনুমোদন করে না।
অন্যায় করা থেকে সতর্কতা
কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া বা গীবত করা থেকে সতর্ক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যিনি কষ্ট পান, তিনি তা সহজে ভুলতে পারেন না। যদি ক্ষমা না হয়, আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। কোরআনে বলা হয়েছে, “আর আপনার রব কখনো ভুলে যান না।” (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৬৪)
ইমাম শাফি (রহ.) বলেছেন, এই আয়াত প্রত্যেক গুনাহগারের জন্য সতর্কতার কারণ হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি কাজের হিসাব রাখেন। হাদিসে উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি অন্যের সম্মান, সম্পদ বা অন্য কিছুর প্রতি অন্যায় করে, সে বিচারের দিনে তার নেক আমল হারাবে। যদি নেক আমল না থাকে, অন্যায়ের শিকার ব্যক্তির গুনাহ তার ওপর চাপানো হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৪৯)
ক্ষমা ও সতর্কতার গুরুত্ব
যদি কেউ আপনাকে কষ্ট দেয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাকে ক্ষমা করার চেষ্টা করুন। আর যদি আপনি অনিচ্ছায় অন্যকে কষ্ট দেন, ক্ষমা চেয়ে নিন। অন্যায়, জুলুম ও গীবত থেকে বিরত থাকা আমাদের হৃদয়কে পবিত্র রাখে।
সময় কষ্টকে হালকা করতে পারে, কিন্তু অন্যায়ের কষ্ট সহজে মুছে যায় না। আমাদের রব কখনো ভুলে যান না। তাই সতর্ক ও দায়িত্বশীল হয়ে চলা এবং ক্ষমার মাধ্যমে হৃদয়কে পরিশুদ্ধ রাখা অত্যন্ত জরুরি।