হামাসের হাতে আটক থাকার পর মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবার জানিয়েছেন, তাদের প্রিয়জনরা ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন। দিনের পর দিন অনাহারে থাকা, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়া এবং ভয় দেখিয়ে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলার মতো নির্মম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তারা।
গত কয়েক মাস ধরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে বহু ইসরায়েলি নাগরিক অপহৃত হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় কিছু বন্দি মুক্তি পেলেও, তারা যে অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন, তা বর্ণনার অতীত। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমের সামনে তাদের সন্তানদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন, যা গাজায় চলমান সংকটের মানবিক বিপর্যয়কে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
অপহরণের পর দুর্বিষহ জীবন
হামাসের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া এক কিশোরের বাবা সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ছেলে ফিরে এসেছে, কিন্তু সে আর আগের মতো নেই। ওর চোখে এখনো ভয় লেগে আছে। বন্দি অবস্থায় ওরা দিনের পর দিন না খেয়ে থেকেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অন্ধকার কক্ষে কাটিয়েছে।”
অনেক মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দির স্বজনেরা জানান, তাদের প্রিয়জনদের অপহরণের পরপরই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। খাবার দেওয়া হয়নি, বিশুদ্ধ পানি পর্যন্ত পান করতে পারেননি। তাদেরকে ছোট ছোট ঘরে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল, যাতে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
ভয় ও মানসিক নির্যাতন
এক মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুর মা জানান, “আমার মেয়েকে বারবার ভয় দেখানো হয়েছে যে, তাকে কখনোই মুক্তি দেওয়া হবে না। ওদের মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার জন্য নানা রকম কথা বলা হতো।”
অনেক বন্দি বলেছেন, তাদের প্রতিনিয়ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ছবি দেখিয়ে ভয় দেখানো হতো এবং বলা হতো যে, তারা আর কখনো পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবে না।
পরিবারগুলোর আকুতি ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে সকল বেসামরিক বন্দিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। তবে, গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এবং রাজনৈতিক জটিলতার কারণে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বন্দিদের পরিবারগুলো বিশ্ব নেতাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা দ্রুত কূটনৈতিকভাবে সমাধান বের করে। ইসরায়েলি সরকারও অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্ত করতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত যত দীর্ঘ হবে, তত বেশি বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন প্রশ্ন হলো, অবশিষ্ট বন্দিদের কীভাবে দ্রুত মুক্ত করা সম্ভব? বিশ্বের নেতারা কি এই সংকটের দ্রুত সমাধান খুঁজে পাবেন, নাকি যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে?