সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর :
দিনাজপুর খানসামার ইছামতি নদীর পাঁচ শতক জায়গা জুড়ে ভাসমান পদ্ধতিতে লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যুবক মোস্তাকিম ইসলাম (২৫)।
ইউটিউবে ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি পানিযুক্ত পরিত্যক্ত নদী-অংশকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন সবজি বাগান। তাঁর এ সাফল্য এখন এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
মোস্তাকিম উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানগড়ের ঝাপুপাড়া গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে। বসতভিটা ছাড়া আর কোনো আবাদি জমি না থাকায় তিনি নদীর জায়গাকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। নদীতে স্রোত না থাকলেও হাঁটু-সমান পানির ওপর বাঁশের মাচা তৈরি করে, টব বা ছোট পাত্রে মাটি ভরে তিনি লাউ গাছের চারা রোপণ করেন। বর্তমানে পুরো মাচাজুড়ে লাউয়ের সবুজ গাছ, ডগায় ডগায় ঝুলছে লম্বা লম্বা লাউ—যা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, স্বাদেও তেমনি উৎকৃষ্ট।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক মোস্তাকিম ইসলাম তার ভাসমান লাউক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বাঁশের খুঁটি, মাচা, টব ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে এই অভিনব বাগান। অল্প পুঁজি—মাত্র এক হাজার টাকা ব্যয়ে তিনি যে উদ্যোগ নেন, এখন তা তাকে ৩৫০০–৪০০০ টাকার লাউ বিক্রির সম্ভাবনা এনে দিয়েছে।
মোস্তাকিম বলেন,পরিত্যক্ত নদীর অংশটাকে কাজে লাগানোর চিন্তা থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করি। পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পর এখন বাজারেও বিক্রি করতে পারছি। এতে ভালোই আয় হয়।
তাঁর সফলতা দেখে এলাকার অন্য যুবকরাও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর এমন পরিত্যক্ত জায়গায় লাউ চাষ হবে—এটা আগে কেউ ভাবেনি। এখন দেখে সত্যিই অভিভূত হচ্ছি। আমরাও এমন উদ্যোগ নিতে চাই।
স্থানীয় কৃষক আব্দুস সালাম জানান, বর্ষাকালে নদীতে পানি বেশি থাকলেও সারা বছর স্রোত থাকে না। এই জলাবদ্ধ জায়গাকে কাজে লাগিয়ে যদি সমবায় ভিত্তিতে ভাসমান কৃষি করা যায়, তাহলে এলাকার সবজির চাহিদা পূরণ তো হবেই, বাইরেও সরবরাহ করা সম্ভব।
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মমিনুল বিন আমিন বলেন,কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁকে বীজ ও সারসহ প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর উদ্যোগ দেখে অনেকেই ভাসমান কৃষিতে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন,পরিত্যক্ত ও অনাবাদি জমিকে আবাদে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা নিয়মিত কৃষকদের উৎসাহ দিই। ভাসমান কৃষি এ অঞ্চলে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় সংবাদ কর্মী রকিবুল ইসলাম রকি বলেন,
মোস্তাকিম ইসলামের মতো তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ স্থানীয় কৃষির চেহারা বদলে দিতে পারে—এমনটাই মনে করছেন এলাকার মানুষ। পরিত্যক্ত নদীপাড়ও এখন সবুজের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ হচ্ছে, বাড়ছে কর্মসংস্থান ও আয়—যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

