ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার দুর্নীতি তদন্তে পদে পদে বাধা আসছে। তার পরিবার, স্বজন, অনুগত সামরিক-বেসামরিক আমলা ও হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রে অর্থের জোগানদাতা অলিগার্কদের দুর্নীতি তদন্তে বাধা আসতে শুরু করেছে নানা কোণ থেকে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ঘাটে ঘাটে সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে রণেভঙ্গ দেয় সে লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র চলছে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন ভেঙে দেয়ারও। লক্ষ্য হাসিলে হাসিনার দীর্ঘ মাফিয়াতন্ত্রের সহযোগী, অলিগার্করা গঠন করেছেন অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল। লুণ্ঠিত ও পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছে এ তহবিল। তহবিলের অর্থ ব্যবহৃত হবে সরকারের ভেতর থেকে অস্থিরতা সৃষ্টি, দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, বিদ্যমান কমিশন ভেঙে দেয়া এবং দুর্নীতির বিচারকে অনিশ্চিত করে তোলা। আর এসব কাজের বরকন্দাজি করছেন সরকারের ভেতরে ওঁৎপেতে থাকা প্রভাবশালী আমলা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তার পদ আঁকড়ে থাকা হাসিনার আমলে সুবিধাভোগী অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, পুলিশ, বিচারপতি ও বিচারক। ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে ‘মিডিয়া পার্টনার’হিসেবে রয়েছে ১০ অলিগার্কের নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদ মাধ্যম।
একটি জাতীয় পত্রিকার সুত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য, সহযোগী দুর্নীতিবাজ সামরিক-বেসামরিক আমলাদের যাতে সহসাই বিচারের মুখোমুখি করা না যায় সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে শুরু হয়েছে অসহযোগিতা। দুদকের তদন্ত টিমে কাজ করছেন এমন একাধিক সদস্য জানিয়েছেন এসব দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতির অনেক আলামতই এরই মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের চার মাস পর পুনর্গঠিত হয় দুদক। গত ষোল বছরে দুর্নীতির বহু আলামত গায়েব করে দেয়া হয়। ফলে অনুসন্ধান ও তদন্তের প্রয়োজনে রেকর্ডপত্র চাওয়া হলে সহজেই মিলছে না । নানা ছুতোয় গড়িমসি করছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে অনুসন্ধান এবং তদন্তের বিধিবদ্ধ যে সময়সীমা রয়েছে, এর মধ্যে সম্পন্ন করা যাচ্ছে না অনুসন্ধান। আবেদন দিয়ে কমিশনের কাছ থেকে সময় চাইতে হচ্ছে। রেকর্ডপত্র চেয়ে একবার রিকুইজিশন দিলে নথি আসছে না। চিঠি দিতে হচ্ছে একাধিকবার। অর্থাৎ সময়ক্ষেপণের একটি কৌশল সুস্পষ্টতই লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে অনুসন্ধান এবং চার্জশিট দাখিল নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
দুদক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার আট মেগা প্রকল্পে অন্তত ২১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয় গত ডিসেম্বরে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পৃথক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ৯ প্রকল্পে হাসিনা এবং তার পরিবারের দুর্নীতির আপাত অর্থমূল্য ৮০ হাজার কোটি টাকা। ইভিএম ক্রয় প্রকল্পেও আত্মসাত হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। এটির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। বিদ্যুৎ বিভাগে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতেরও অনুসন্ধান চলছে। দেড় দশকের সরকারি কেনাকাটায় যে দুর্নীতি হয়েছে সেগুলোতে এখনো হাতই দেয়া হয়নি। সঙ্গত কারণেই এসব দুর্নীতির অনুসন্ধান-তদন্তে বেরিয়ে আসছে হাসিনার উচ্ছিষ্টভোগী সামরিক-বেসামরিক আমলা, প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও অলিগার্কদের সংশ্লিষ্টতা।
এর মধ্যে হাসিনা এবং তার পরিবার-স্বজনের বিরুদ্ধে পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দুর্নীতির একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান মুজিব ববিসহ রাজউক ও গণপূর্ত বিভাগের অন্তত ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।