ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা বানিজ্যিকভাবে শীতকালীন বেগুন, টমেটো, লাউ, মরিচ, পেপে, বাঁধাকফি, ফুলকফি,করলাসহ নানা জাতের সবজি চারা উৎপাদন শুরু করেছে। এখানকার উৎপাদিত চারার মান ভালো হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে এর কদর রয়েছে বেশ। এদিকে পৗর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে শীতকালীন আগাম জাতের সবজি চারা বিক্রি বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। কৃষকরা সকাল থেকে পরিচর্যার ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাট বাজারে চারা বিক্রিতে দর ভালো পাওয়ায় কৃষকরা বেজায় খুশি।
একাধিক কৃষক জানায়, মৌসুম অনযায়ী বছরজুড়ে নানা প্রজাতির সবজি চারা উৎপাদন করে বিক্রি হলে শীত কালে এর চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে যায়। কৃষকরা এখন আগাম জাতের শীতকালীন নানা জাতের সবজি চারা উৎপাদন করে বিক্রি শুরু করেছে। উৎপাদন হওয়া প্রতি চারা ১০-৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
কৃষি কাজের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানায়, দিন দিন সবজি চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তারা নানা প্রকারের সবজি চাষ করে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পুরণ করছে। সামনে শীত কাল আসায় আগাম জাতের সবজি চাষ শুরু হওয়ায় হাট বাজারসহ সর্বত্র সবজির চারা বিক্রি শুরু হয়েছে। কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের সবজির চারা উৎপাদন করে বিক্রিতে লাভবার হচ্ছেন ।
সরেজমিনে পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সবজি বাগানের মালিকসহ শ্রমিকরা আগাম শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদন পরিচর্যা ও বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছনে। এরমধ্যে কেউ করছনে জৈব সারে মাটি উর্বর, জিও ব্যাগে বীজ চারা রোপন, আবার কেউ বা করছেন বিক্রির জন্য চারা উত্তোলণ। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলছে কাজ।
এদিকে পৌর শহরের সড়ক বাজার গিয়ে দেখা যায় বেগুন, টমেটো, লাউ, মরিচ, পেপে, বাধাকফি, ফুলকফি,করলাসহ নানা জাতের সবজি চারা নিয়ে বসে আসেন বিক্রেতারা। সকাল থেকে বিকাল পযর্ন্ত চলে তাদের বেচাকেনা। এসব সবজির চারা প্রকারভেদে ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
একাধিক চারার মালিক জানান, মৌসুম অনুযায়ী বছরজুড়ে কমবেশী সবজির চারা বিক্রি করা হলেও শীতকালে এর চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে যায়। কারণ এসময় শুস্ক মৌসুমে থাকায় কম বেশী সকলেই সবজি চাষ করছেন। এতে করে সবজি চারার কদর বেড়ে যায়। এসব সবজির চারা উৎকৃষ্ট মান ও উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া শৌখিন কৃষকরা বাড়ি থেকে ক্রয় করছেন।
চারা বিক্রেতা মো: আব্দুল কাদির মিয়া বলেন, বাড়ি সংলগ্ন ২ বিঘা জমিতে মিশ্র নার্সারি বাগান করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০ শতাংশ জায়গাতে বেগুন, টমেটো, লাউ, মরিচ,পেপেসহ নানা জাতের সবজি চারা রয়েছে। বাকী জায়গাতে দেশি-বিদেশি ফল, ফুল, ভেষজ, ওষধিসহ বিভিন্ন জাতের চারা রয়েছে। সামনে শীত আসায় আগাম জাতের সবজি চারা উৎপাদন করা হয়েছে। এসব চারা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করছি। প্রতিপিচ চারা ১০-৫০ টাকায় বিক্রি করছি। দৈনিক ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার উপর চারা বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন সবজির চারা একটি লাভ জনক ব্যবসায়। স্বল্পপুজিতে ভালো টাকা আয় করা যায়। অন্যান্য বছরের চাইতে এবার চারার মান রয়েছে খুবই ভালো। আশা করছি এ মৌসুমে ৩ লক্ষ টাকার উপর চারা বিক্রি হবে।
চারা বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, সবজির চারা কমবেশী সব সময় চাহিদা থাকে। তবে শীত মৌসুমে বেশী বিক্রি হয়। বেশ কিছুদিন দরে আগাম জাতের শীতের সবজি চারা বিক্রি করছি। অনেকে যোগাযোগ করে বাড়ি থেকে চারা ক্রয় করছে। বাড়ি সংলগ্ন প্রায় ১৫ শতাংশ জমিতে বেগুন, পেপে, টমেটো, মরিচসহ নানা জাতের সবজি চারা করি। জমি প্রস্তুুত বীজসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার চারা বিক্রি করছি। তিনি আরও বলেন চারাগুলো প্রখর রোদ থেকে রক্ষার জন্য সকালে ঢেকে দেয়া হয়, আবার বৃষ্টি হলেও ঢেকে রাখা হয়। স্থানীয় বাজারে একটি চারা ৩ টাকা থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছি। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে যাবতীয় খরচ বাদে বছরে চারা বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা আয় হয় বলে জানায়।
সৌখিন কৃষক মো: আফজাল হোসেন বলেন, প্রতি বছর শীতকালে বাড়ি সংলগ্ন জায়গাতে সবজি চাষ করা হয়। এবার ২০ শতাংশ জায়গার মধ্যে আগাম শীতকালীন টমেটো, লাউ ও মরিচের চারা ক্রয় করে আবাদ করি। তিনি বলেন এক সময় নিজে বীজ থেকে চারা তৈরী করে চাষ করা হতো। নিজের তৈরী করা চারাতে তেমন ফলন হতো না। কিন্তু ক্রয়করা চারায় ফলন ভালো হচ্ছে বলে জানায়।
কৃষক মো: আকবর হোসেন বলেন, বাড়ি সংলগ্ন জায়গাতে বছরের বেশীভাগ সময় নানা জাতের সবজি চাষ করছি। সবজির চারা উৎপাদন করতে অনেক পরিশ্রম হওয়ায় ঝামেলা এড়াতে গত কয়েক বছর ধরে চারা ক্রয় করে আবাদ করছি। এতে ফলন ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এবার সময়ের আগেই আগাম জাতের টমেটো, বেগুন, মরিচ, লাউ চাষ করেছি। আশা করছি ফলন ও ভালো পাওয়া যাবে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মাসুদ রানা বলেন উপজেলার অনেক চাষি এবং নার্সারি মালিক সবজি চারা উৎপাদন করে নিজ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সরকার কৃষকের মাঝে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা হিসেবে সবজি বীজ বিতরণ করছে। তিনি আরও বলেন সবজির চারা একটি লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় চারার গুণগতমান বজায় রাখতে ও নতুন নতুন জাত ও আগাম সবজির চারা উৎপাদনে নিয়মিত কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।







