মোঃ হামিদুর রহমান লিমন,ক্রাইম রিপোর্টারঃ
শ্যামা সুন্দরী রংপুর নগরীর একটি খালের নাম। এটি ‘রংপুরের ফুসফুস’ বলে পরিচিত। খাল হলেও এর দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার; গভীরতা ৪০ ফুটেরও বেশি ছিল। বায়ুবাহিত রোগ থেকে পরিত্রাণ ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে খালটি ১৮৯০ সালে খনন করা হয়। নগরীর সিও বাজার এলাকার ঘাঘট নদীর উৎসমুখ থেকে শুরু হয়ে খোখসা ঘাঘটের সঙ্গে মিলেছে। মাকড়সার জালের মতো রংপুর নগরীর আষ্টেপৃষ্ঠে রয়েছে এ খাল।
একটা সময় নদীর মতো স্রোত ও প্রবাহ ছিল। মহানগরীর সব পানি এই শ্যামা সুন্দরী খালের দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা নদীতে পতিত হতো।
শ্যামা সুন্দরী খালের গৌরবময় অতীত ছিল। পানির ছিল স্বচ্ছ। পাশাপাশি শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। সব নদীর পানি যেমন বঙ্গোপসাগরে মেশে, তেমনি রংপুর নগরীর পানি বুকে নেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল শ্যামা সুন্দরী। বর্তমানে শহরে কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা যায়। শ্যামা সুন্দরী ভরাট হওয়ার ফলে পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। মানুষ এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করেছে একে। ঘরবাড়ির আবর্জনা খালে ফেলে দিচ্ছে।
খালটি ভরাট হয়ে দিন দিন এর আকার সংকুচিত হচ্ছে। এক সময়ের স্বচ্ছ পানির এই খাল বর্তমানে দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়াবহ। মানুষের গোসল দূরের কথা, খালের কাছাকাছি গিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়াও কষ্টকর। এখন খালের কালো বর্ণ ধারণ করা দূষিত পানি আর ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে হাঁটাও দায় হয়েছে রংপুরবাসীর।
শুধু তাই নয়, এই খাল এখন মশা প্রজননেরও কারখানা। ফলে সেখানকার মানুষ বায়ুবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে রংপুর নগরীর বিভিন্ন স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থী আছে হুমকির মধ্যে। রংপুর নগরীর অনেকটা অংশ জুড়ে শ্যামা থাকায় অধিকাংশ মানুষ এ সমস্যার ভুক্তভোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খালের সেবা-শুশ্রূষা না করলে রংপুর শহর বসবাসের অযোগ্য হতে পারে। মানুষ যে পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা খালে ফেলছে এবং দখল করে নিচ্ছে, খুব দ্রুতই এ খাল বিলীন হতে পারে।
চোখের সামনে প্রবহমান একটি খাল বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শ্যামা সুন্দরী খালটির সুন্দরী ট্যাগটি আজ বড্ড বেমানান। সবার
মতো শ্যামাও আজকে বাঁচতে চায়। রংপুর নগরীর গোটা পানির দায়িত্ব সে নিতে চায়। তার দায়িত্ব পালনে আমরা কি হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত?