আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তেহরানে একটি গোপন স্থাপনায় অনুষ্ঠিত ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ইসরায়েলের চালানো হামলায় দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সামান্য আহত হয়েছেন। ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম ফার্স নিউজ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা–ও খবরটি প্রকাশ করেছে।
ঘটনাটি ঘটে গত ১৫ জুন, যখন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান, সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের কালিবাফ এবং প্রধান বিচারপতি গোলাম-হোসেইন মোহসেনি একত্রে একটি গোপন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে অংশ নিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় ভবনটির প্রবেশ ও নির্গমনপথ লক্ষ্য করে একযোগে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমা নিক্ষেপ করা হয়।
হামলার ধরণ ছিল এতটাই নির্ভুল যে ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকের গোপন তথ্য ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে ফাঁস করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে ফার্স।
হামলার পর ভবনটির প্রধান নির্গমনপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মকর্তারা একটি জরুরি বিকল্প পথ দিয়ে বেরিয়ে আসেন। এই সময় পালানোর সময় প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান তার পায়ে সামান্য আঘাত পান।
গোয়েন্দা তৎপরতা ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ
হামলার পর ইরান দেশব্যাপী ‘মোসাদ সংশ্লিষ্ট’ সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় চালায়। ইতোমধ্যে আটক অনেকের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরও হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
হামলার ধরন অনেকটা গত বছরের সেপ্টেম্বরে বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর ওপর পরিচালিত ইসরায়েলি অভিযানের সঙ্গে মিলে যায়। তবে তেহরানের এই গোপন হামলা সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় সংঘটিত হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
পেজেশকিয়ানের বক্তব্য ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গত সপ্তাহে মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান অভিযোগ করেন, ইসরায়েল তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। তবে তিনি এ সময় এই প্রচেষ্টা সাম্প্রতিক যুদ্ধের অংশ কিনা, তা স্পষ্ট করেননি।
ইসরায়েল এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
পূর্বাপর: সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ ও উচ্চপদস্থ নিহতরা
গত ১৩ জুন ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা শুরু করে। জবাবে ইরানও ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালায়, যার ফলে উভয় দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কিন্তু ভয়াবহ যুদ্ধ বেধে যায়।
যুদ্ধের প্রথম দিনেই নিহত হন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ পরে জানান, তারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এমনকি সংঘাতের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইরানকে পারমাণবিকভাবে সম্পূর্ণ নিঃশেষ করার হুমকি দেন এবং দাবি করেন, “তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে।”
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা শুধু একটি নির্দিষ্ট সামরিক অভিযান নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-ইরান বিরোধের এক নতুন মাত্রা। প্রেসিডেন্টের ওপর হামলার ঘটনা গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা কাঠামোয় বড় ধরনের বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।