ইউক্রেনের সুমি শহরে রোববার রাশিয়ার চালানো ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩১ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে দুই শিশু। আহত হয়েছেন আরও ৮৪ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে ১০ জন শিশু। কিয়েভের জরুরি পরিষেবা বিভাগের বরাতে এই মর্মান্তিক ঘটনার তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।
এই হামলার সময় আন্তর্জাতিক মহলে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এমন আক্রমণ চালানো হয়, যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপের একাধিক দেশ রাশিয়ার এই আচরণের কড়া সমালোচনা করেছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ বলেন, এখন সময় এসেছে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর। তার ভাষায়, রাশিয়া একাই যুদ্ধ চায় এবং এখন সেটি আরো স্পষ্ট। মানুষের জীবন নিয়ে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই, আন্তর্জাতিক আইন বা কূটনৈতিক চেষ্টাকেও তারা তুচ্ছজ্ঞান করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, এবং ফ্রান্স ও তার মিত্ররা সেই লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এই নৃশংসতা আবারও প্রমাণ করে যে প্রেসিডেন্ট পুটিনের আগ্রাসনে ইউক্রেনের মানুষ এখনো রক্তাক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বারবার শান্তির জন্য চেষ্টা করে গেছেন, তাই এখন পুটিনের উচিত অবিলম্বে পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়া।
জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এই আক্রমণকে বর্বরোচিত হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, রাশিয়া একদিকে শান্তির কথা বলে, আর অন্যদিকে এভাবে প্রাণঘাতী হামলা চালায়—এতেই বোঝা যায় তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য। জার্মানির সম্ভাব্য পরবর্তী চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস আরও এক ধাপ এগিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলেন।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টেরসন মন্তব্য করেন, যে দেশ সত্যিই শান্তি চায়, তারা কখনোই এই ধরনের ভয়াবহ হামলা চালাতে পারে না। ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ডকে কাপুরুষোচিত এবং অপরাধমূলক বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কিয়েভে নিযুক্ত বিশেষ দূত কিথ কেলোগ বলেন, এই হামলা সকল মানবিক সীমা অতিক্রম করেছে। তার ভাষায়, সাধারণ মানুষের ওপর এই ধরনের সরাসরি হামলা একটি গুরুতর অন্যায়, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই তুরস্ক আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার কৃষ্ণসাগর অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক বৈঠকের আয়োজন করেছে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বৈঠকে অংশ নেবেন বিভিন্ন দেশের সামরিক বিশেষজ্ঞরা। যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেন এই বৈঠকে যোগ দেবে কি না, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু জানায়নি তুর্কি কর্তৃপক্ষ।