গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই পুরো গাজা উপত্যকা দখলের ঘোষণা দিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। স্পষ্ট করে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসের প্রতিরোধ ভেঙে দিয়ে গাজার প্রতিটি অঞ্চল ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা চলছে।
নেতানিয়াহু বলেন, “হামাস যাতে মানবিক সহায়তা লুট করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই গাজা আমাদের দখলে নিতে হবে। এটাই আমাদের যুদ্ধ এবং বিজয়ের রূপরেখা।”
সম্মুখযুদ্ধে জর্জরিত আইডিএফ
যুদ্ধ পরিস্থিতির জটিলতা অকপটে স্বীকার করে নেতানিয়াহু জানান, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের তীব্র হামলায় গাজার ভেতরে প্রবেশ করে আইডিএফ সেনারা ভয়াবহ সংঘর্ষের মুখে পড়ছে। এরইমধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকায় ফের বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। আকাশ থেকে বোমা আর মাটিতে আগুন—চারপাশ যেন মৃত্যুপুরী।
শরণার্থী হয়ে ছুটছে ফিলিস্তিনিরা
ধ্বংস আর বোমার ছায়ায় গাজা থেকে হাজারো মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং বিদ্যুৎহীনতার মধ্যে দিন কাটছে লাখো মানুষের। সীমিত ত্রাণ সহায়তা থাকলেও তা চরমভাবে অপর্যাপ্ত।
পশ্চিমা সমর্থনে ফাটল
মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র ছড়িয়ে পড়তেই আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইল কিছুটা নমনীয় হতে বাধ্য হয়েছে। নেতানিয়াহু জানান, “বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর চাপের কারণেই ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে হয়েছে, যদিও তা কোনো কৌশলগত পিছু হটা নয়।”
তবে স্বীকার করেন, যারা এতদিন ইসরাইলকে অস্ত্র আর নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে আসছিল, তাদের অনেকেই এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা দেখে কিছু পশ্চিমা দেশ তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছে। যদিও নেতানিয়াহু কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি, তবে স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান মিত্রদের মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে।
‘ভিয়েতনামের ছায়া’ গাজায়
বিশ্ব নেতারা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে অভিহিত করছেন। কেউ কেউ একে তুলনা করেছেন ইতিহাসের নৃশংসতম যুদ্ধ ‘ভিয়েতনাম যুদ্ধ’-এর সঙ্গে। প্রতিদিন মৃতের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে, আহতদের জন্য নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা।
দখল নীতিতে অটল ইসরাইল
আন্তর্জাতিক সমালোচনা এবং মিত্রদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও গাজা দখলের পরিকল্পনা থেকে একচুলও সরেননি নেতানিয়াহু। বরং ঘোষণা দিয়েছেন, পরিকল্পনা আরও জোরদার করা হবে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য এই সময়টা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে দুঃসহ। চারদিকে ধ্বংস, ক্ষুধা, রোগ আর অনিশ্চয়তা। গাজার মাটিতে এখনো আলো আসেনি, শুধু ধোঁয়া আর অন্ধকারের ভেতর বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে এক করুণ জাতি।