ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবির থেকে আড়াই লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করেছে। হিব্রু সংবাদমাধ্যম ওয়ালার বরাতে তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি জানিয়েছে, ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করেই এই গণ-স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তা সূত্রগুলো দাবি করছে, ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ কাঠামোতে যোদ্ধারা যেন ফিরে না যেতে পারে, সে উদ্দেশ্যেই এই ‘উচ্ছেদ অভিযান’ চলছে।
ইসরায়েলের তথাকথিত ‘মানবিক অঞ্চল’ শব্দটির আড়ালে গোপন পরিকল্পনার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। নেতানিয়াহু প্রশাসনের ভাষ্যমতে, ‘মানবিক অঞ্চল’ বলতে গাজা উপত্যকার খান ইউনিস ও দেইর আল-বালাহ এলাকার মধ্যবর্তী উপকূলীয় অঞ্চল বোঝানো হচ্ছে। অথচ বাস্তবতা হলো, এই এলাকাগুলোকেও গত কয়েক মাসে নিয়মিত ও ভয়াবহ বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় নারী-শিশুসহ শত শত শরণার্থী নিহত হয়েছে, যারা পূর্বেই ঘরছাড়া হয়ে এইসব অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিল।
ইসরায়েলি মিডিয়াগুলো, বিশেষ করে হারেৎজ, জানিয়েছে যে নেতানিয়াহুর সরকার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত ৭৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে। গাজার জনসংখ্যাকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ থেকে সরিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে জোরপূর্বক সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আক্রমণ করা অঞ্চলগুলোতে স্থায়ীভাবে ইসরায়েলি সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি জানাচ্ছে, প্রচণ্ড হামলার মুখে বহু ফিলিস্তিনি উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে গাজা সিটির পশ্চিমাংশে আশ্রয় নিচ্ছেন। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ইসরায়েলি বাহিনী একদিকে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে মানবিক সহায়তা প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ফলে খাদ্য, পানি ও ওষুধের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে, যা একটি পূর্ণাঙ্গ মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা জাগাচ্ছে।
এই মুহূর্তে গাজা শুধু একটি যুদ্ধক্ষেত্র নয়, বরং একটি মানবিক বিপর্যয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্ছেদ, অবরোধ, দুর্ভিক্ষ ও সামরিক দখলের এই নীতিকে আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা আরও উৎসাহ দিচ্ছে। ফিলিস্তিনি জনগণের অস্তিত্ব ও সম্মানের জন্য এক অবিরাম লড়াই এখন সময়ের কঠিন বাস্তবতা।