চীনের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে নতুন এক যুগের সূচনা করেছে একটি গবেষণা, যেখানে দেখানো হয়েছে—নেটওয়ার্কযুক্ত জ্যামার ব্যবহার করে শত্রু ক্ষেপণাস্ত্রকে ধোঁকা দিয়ে ‘প্রেতবহর’ বা ‘গোস্ট ফ্লিট’ নামক কল্পিত লক্ষ্যবস্তুর দিকে চালনা করা সম্ভব। এই কৌশলে প্রকৃত যুদ্ধজাহাজগুলো রাডারের আওতার বাইরে থেকে নিরাপদে এগিয়ে যেতে পারে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে বেইজিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব টেলিমেট্রি, যা চীনের মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তাদের এই প্রযুক্তি নিয়ে লেখা পিয়ার-রিভিউড গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘Journal of Systems Engineering and Electronics’-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায়।
গবেষণায় একটি নৌযুদ্ধের পরিস্থিতি অনুকরণ করা হয়, যেখানে একটি অ্যান্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্র আটটি যুদ্ধজাহাজ শনাক্ত করে হামলা চালায়। কিন্তু বাস্তবে সেখানে ছিল মাত্র একটি জাহাজ। এর চারপাশে ঘোরাফেরা করা চারটি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (EW) ডিভাইস এমনভাবে সিগন্যাল বিকিরণ করে, যাতে দূরবর্তী রাডার সেগুলোকে আটটি আলাদা জাহাজ হিসেবে চিহ্নিত করে। এই বিভ্রান্তি এতটাই বাস্তবসম্মত যে, উন্নত প্রযুক্তির রাডারও সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যর্থ হয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, মাত্র ১-বিট ডেটা ব্যবহার করেই এই ‘প্রেতবহর’ তৈরি করা যায়। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে একাধিক জ্যামার পরস্পরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে এক ধরণের কল্পিত বহর তৈরি করে। ফলে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা নজরদারি ব্যবস্থাগুলো ভুল পথে পরিচালিত হয় এবং প্রকৃত যুদ্ধজাহাজ নিরাপদে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে।
এই গবেষণা শুধু চীনের প্রতিরক্ষা কৌশলকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়নি, বরং ভবিষ্যতের নৌযুদ্ধ কেমন হবে, তারও একটি ঝলক দেখিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ‘ডিসেপশন টেকনোলজি’-র এক যুগান্তকারী প্রয়োগ, যা বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।