নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ডেমোক্র্যাটিক সমাজতান্ত্রিক প্রার্থী জোহরান মামদানি বিজয়ের পর শহরের আবাসনখাতে দেখা দিয়েছে নতুন অস্থিরতা। রাজনৈতিক পালাবদলের এই সময়ে বিলাসবহুল আবাসন খাতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে— বিশেষ করে উচ্চবিত্ত ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
ম্যানহাটানের বিখ্যাত আবাসন ব্রোকার জে বাত্রা জানান, মামদানির উত্থানের পর তাঁর অনেক ধনী ক্লায়েন্টই এখন সর্তকতা অবলম্বন করছেন। দুইজন ক্লায়েন্ট সম্প্রতি তাঁকে জানিয়েছেন, নিউইয়র্কের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ মাথায় রেখে তাঁরা বড় ধরনের সম্পত্তি কেনাবেচা আপাতত স্থগিত রেখেছেন। সিএনএনের কাছে বাত্রা বলেন, “অনেকে এখন বলছেন, শহরটি কোন পথে যাচ্ছে?”
৩৩ বছর বয়সী মামদানি জুনের শেষ দিকে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জয়ী হওয়ার পর থেকেই উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে এই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, নতুন প্রশাসনের প্রস্তাবিত নীতিমালা সরাসরি আবাসন বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। মামদানি ১০ লাখ ডলারের বেশি আয়কারীদের ওপর ২ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। এছাড়া ভাড়া স্থির রাখা, গণহারে পাবলিক হাউজিং নির্মাণ ও সংস্কার, এবং বাজারে কঠোর নিয়ন্ত্রণের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
যদিও মামদানি মেয়র হলেও এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন সহজ হবে না, কারণ তা নির্ভর করছে সিটি কাউন্সিল ও আইনগত প্রক্রিয়ার ওপর— তবু তাঁর নির্বাচনী জয়ে অনেক বিনিয়োগকারী আতঙ্কে রয়েছে।
নিউইয়র্কে জীবনযাত্রার ব্যয় এবং আবাসন ভাড়া এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী। রিয়েলেটর ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে শহরে গড় চাওয়া ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৯৭ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি এবং ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি। অনেক বিনিয়োগকারী যারা ভাড়া আয়ের জন্য ছোট অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে আগ্রহী ছিলেন, তাঁরা এখন বাজার পরিস্থিতি ও প্রস্তাবিত নীতির কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছেন।
এদিকে, নিউইয়র্ক ছেড়ে ফ্লোরিডা যাওয়ার প্রবণতা আবারও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ফ্লোরিডায় আবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিউইয়র্কের উচ্চবিত্ত শ্রেণির কেউ কেউ ইতোমধ্যে বিকল্প বিনিয়োগের কথা ভাবছেন।
সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আপার ইস্ট সাইডসহ বিভিন্ন এলাকার ফেসবুক গ্রুপগুলোতে বাসিন্দাদের মধ্যে শহর ছাড়ার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। যদিও এসব আলোচনা অনেক সময় রাজনৈতিক চাপের পর হুমকি হিসেবেই থেকে যায়, তারপরও মামদানির বিজয় নিউইয়র্কের অভিজাত শ্রেণির মনে একটা অস্বস্তি তৈরি করেছে, যা শহরের আবাসন বাজারে চাপ তৈরি করতে শুরু করেছে।