গাজায় ইসরাইলি অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় এবার সরাসরি ইসরাইলের বাণিজ্যিক অবকাঠামোকে টার্গেট করল ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। সোমবার (২০ মে) এক টেলিভিশন ভাষণে হুথিদের মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিয়া ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরাইলের হাইফা বন্দর এখন থেকে তাদের ‘লক্ষ্যবস্তু তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে হুথিরা কার্যত ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘সমুদ্র অবরোধ’ শুরু করার হুমকি দিল।
হুথি মুখপাত্র বলেন, “এই মুহূর্ত থেকে হাইফা বন্দর এবং এতে যাতায়াতকারী সব জাহাজ ঝুঁকিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বিষয়টি অবহিত করা হচ্ছে।”
এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে সমুদ্রপথে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর নিরাপত্তা এবং ইসরাইলের বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ধরনের ঝুঁকির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
গাজার প্রতি সংহতি এবং হুথিদের কৌশল
হুথি বিদ্রোহীরা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাধিকবার সংহতি জানিয়েছে এবং ইসরাইলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরও রয়েছে। যদিও অধিকাংশ হামলা ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিহত হয়েছে।
তবে হুথিরা জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজের ওপর হামলা আপাতত স্থগিত রাখছে। এটা এক কৌশলগত সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা, কারণ হুথিদের মূল লক্ষ্য এখন ইসরাইলকে সরাসরি চাপে ফেলা।
হুথিদের বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযান
এই ঘোষণার পটভূমিতে রয়েছে গত কয়েক মাস ধরে ইয়েমেনে মার্কিন সামরিক অভিযান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসার পর, মার্চ থেকে ইয়েমেনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের বিমান ও নৌবাহিনীর অভিযান শুরু করে। এনবিসি নিউজের তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ১০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করেছে এবং হাজার হাজার বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
১৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় ইয়েমেনের বিভিন্ন অঞ্চল অন্তত এক হাজারবার মার্কিন বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়েছে। তবে ট্রাম্প ৮ মে ওই অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেন।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন মোড়
হুথিদের এই সর্বশেষ ঘোষণা স্পষ্ট করে দিচ্ছে, গাজা সংকটের ছায়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলেও দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। হাইফা বন্দরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নোঙর যদি হুমকির মধ্যে পড়ে, তাহলে তা শুধু ইসরাইল নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি এক নতুন পর্বের শুরু—যেখানে গাজার যুদ্ধ শুধু স্থলসীমায় সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং সমুদ্রপথেও ছড়িয়ে পড়ছে। এবং এই উত্তেজনা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আন্তর্জাতিক মহলের জন্য এটি হয়ে উঠবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া এক সংকট।