যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী শিল্পপতি ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক টাইমস একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাস্ক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ বিভাগের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিয়মিত কিটামিন, এক্সটাসি এবং সাইকেডেলিক মাশরুম সেবন করতেন। ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, মাস্ক এমন পর্যায়ে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন যে প্রতিদিন প্রায় ২০টি বড়ি সঙ্গে রাখতেন, যার কারণে তার মূত্রথলিতে সমস্যা দেখা দেয়।
মাস্কের মাদক সেবনের মাত্রা ট্রাম্প প্রশাসনে যোগদানের পর আরও বেড়ে যায়। এই সময়ই তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণায় ২৭৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন। গত বুধবার রাতে মাস্ক হোয়াইট হাউসের সরকারি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এর আগে তিনি মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও জনসভায় নাৎসি-সদৃশ স্যালুট প্রদর্শনের মতো আচরণে সমালোচিত হন।
ওভাল অফিসে বিদায় অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাস্ক তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি বলেন, “নিউইয়র্ক টাইমস? এটা কি সেই একই পত্রিকা, যারা রুশিয়াগেট নিয়ে ভুল রিপোর্ট করে পুলিৎজার জিতেছিল?” এছাড়া, পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প মাস্কের মাদক গ্রহণ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান এবং তাকে ‘দুর্দান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (ডিইএ) এক্সটাসিকে ‘শিডিউল ১’ মাদক হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে, যা কোনো বৈধ চিকিৎসায় ব্যবহৃত নয় এবং সরকারি কর্মচারীদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিটামিন ‘শিডিউল ৩’ মাদক হিসেবে বিবেচিত হলেও তার বিনোদনমূলক ব্যবহার সরকারি নিয়মকানুন লঙ্ঘন। মাস্ক দাবি করলেও যে তিনি শুধুমাত্র দুই সপ্তাহে একবার ‘সীমিত পরিমাণে’ কিটামিন নেন, নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে তিনি অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করতেন এবং এটি তার শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়েছিল।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস বলেন, মাস্ক অনেক পেশাদার রাজনীতিবিদের তুলনায় বেশি অবদান রেখেছেন এবং খুব কম কর্পোরেট নির্বাহী সরকারি দায়িত্ব নিতে রাজি হন, কিন্তু মাস্ক সেটি করেছেন। স্পেসএক্স কোম্পানি তাদের সরকারি চুক্তির কারণে কর্মীদের জন্য কঠোর মাদকমুক্ত কর্মপরিবেশ বজায় রাখে, কিন্তু মাস্ক আগাম ড্রাগ টেস্টের তথ্য পেয়ে পরীক্ষাগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে ফেলতেন।
মাস্কের মাদক সেবনের তথ্য ও তার ঘনিষ্ঠদের কাছে পাওয়া অ্যাডেরাল ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ওষুধের ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। তবে এখনো নিশ্চিত নয় যে, মাদক গ্রহণের প্রভাবে তিনি সরকারি দায়িত্ব পালন করতেন কি না। এই বিষয়ে তদন্ত ও আলোচনা চলমান রয়েছে।