মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যেন এখন বিস্ফোরণের অপেক্ষায়। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলার জবাবে এবার পাল্টা কড়া বার্তা দিয়েছে ইরান। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, তারা শিগগিরই আবারও ইসরায়েলের ভেতরে সরাসরি হামলা চালাবে। আর সেই হামলার দৃশ্য ‘বিশ্ববাসীকে সরাসরি দেখার’ আমন্ত্রণ জানিয়েছে তেহরান।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, “আগামী প্রতিক্রিয়া হবে আগের যেকোনো অভিযানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, বিস্তৃত ও দর্শনীয়। আমরা চাই, পুরো বিশ্ব তা সরাসরি দেখুক। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোতে এই বার্তাটি জোরেশোরেই প্রচার করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য কেবলমাত্র ইসরায়েলকে নয়—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা বিশ্বকে লক্ষ্য করেই ছোড়া হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন সামরিক ড্রোন, স্যাটেলাইট ও গোয়েন্দা প্রযুক্তির প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী হামলার ধরণ ও সময় নির্ধারণ করতে চায় ইরান।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, এটি একধরনের ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ও। তেহরান চায়, সারা বিশ্ব ইসরায়েলের মাটিতে আঘাত হানার দৃশ্য নিজের চোখে দেখুক—যাতে জনমত ঘুরে দাঁড়ায় এবং ইসরায়েলকে আর আগ্রাসন চালাতে না দেওয়া হয়।
অন্যদিকে ইসরায়েল এখনো ইরানের হুঁশিয়ারির ব্যাপারে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সকল সামরিক ঘাঁটি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে ‘উচ্চ সতর্কতায়’ রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে ১৩ জুন ভোররাতে ইসরায়েল তাদের বিমান বাহিনী দিয়ে ইরানের অন্তত আটটি শহরে একযোগে ভয়াবহ হামলা চালায়। এই হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজধানী তেহরান, ইসফাহান, শিরাজ, মাশহাদ, ইয়াজদ ও কোম শহর। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৮ জন নিহত এবং প্রায় ৩০০ জন আহত হয়েছেন। ইরানের শতাধিক সামরিক ঘাঁটি ও অস্ত্রভাণ্ডারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এই হামলার পর থেকেই তেহরানে আতঙ্ক ও ক্ষোভের পরিবেশ বিরাজ করছে। দেশের বিভিন্ন শহরে নাগরিকদের মাঝে যুদ্ধ-সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ইরানের পক্ষ থেকে এই ‘বিশ্ব সম্প্রচারযোগ্য হামলা’র ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও অগ্নিগর্ভ করে তুলেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও জাতিসংঘের সক্রিয় হস্তক্ষেপ জরুরি, নইলে এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে।