পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখা আইএসপিআরের প্রধান মেজর জেনারেল আহমদ শরিফ চৌধুরী সম্প্রতি জোর দিয়ে বলেছেন, বেলুচিস্তান পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটি কখনোই আলাদা হবে না। ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ‘হিলাল টকস’ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় দুই হাজার শিক্ষকের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তার দাবি, ভারত বেলুচিস্তানে সন্ত্রাস ও অস্থিরতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নামক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটি ভারতের অর্থায়নে সক্রিয় এবং এর নেতৃত্ব বর্তমানে ভারতের মাটিতে অবস্থান করছে। এই সংগঠনকে তিনি “হিন্দুস্তানের ফিতনা” বলে আখ্যায়িত করেন এবং দাবি করেন, এর সদস্যরা ভারতের হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
মেজর জেনারেল আহমদ শরিফ বলেন, এসব সশস্ত্র সংগঠন শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মতে, বেলুচিস্তান কেবল ভৌগোলিকভাবে নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ভবিষ্যতে এটি দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অঞ্চলে পরিণত হবে। একইসঙ্গে তিনি সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ও সম্পর্ককে ‘বিশ্বাসভিত্তিক ও চিরস্থায়ী’ বলে উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, বেলুচিস্তান নিয়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থানও তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। কোয়েটায় এক বড় জির্গায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, যারা উগ্রপন্থার পথে গেছে, তাদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাতে হবে। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব, এজন্য সবাইকে একে অপরকে ভাই হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, যারা উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে, তারা সন্ত্রাস ও বিভ্রান্তির মাধ্যমে জনগণকে ধোঁকা দিতে চায় এবং এসব ষড়যন্ত্র রুখতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, করাচি-কোয়েটা মহাসড়ক যেটিকে ‘রক্তাক্ত সড়ক’ হিসেবে ডাকা হয়, তা সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং বেলুচিস্তানের উন্নয়নে আসন্ন বাজেটে ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ বিতরণেরও ঘোষণা দেন তিনি।
তবে সরকারি বক্তব্যের বাইরে রয়েছে আরেক বাস্তবতা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দীর্ঘদিনের অভিযোগ অনুযায়ী, বেলুচিস্তানে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও রাজনৈতিক কর্মীদের দমন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সংস্থা বারবার এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরেছে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকরাও বলছেন, প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বেলুচিস্তান দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসনের কাছে বঞ্চনার শিকার। উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোর দিক থেকে এই প্রদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক দমনের সংস্কৃতি এ অঞ্চলে বহু মানুষকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। সরকারের বারবার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, বেলুচিস্তানের বাস্তবতা এখনো রয়ে গেছে চরম বৈষম্য ও বঞ্চনার বৃত্তে বন্দি।