অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের জীবনের গল্প অনুপ্রেরণায় ভরপুর। একজন একক মায়ের সন্তান অ্যালবানিজ বড় হয়েছেন সরকারি অনুদানের ছোট একটি ফ্ল্যাটে। তাঁর মা সব সময় চাইতেন, ছেলে যেন তাঁর চেয়ে ভালো জীবন পায়—এটাই হয়ে ওঠে অ্যালবানিজের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা।
স্কুলজীবন কেটেছে ক্যাম্পারডাউনের একটি সাধারণ স্কুলে ও সেন্ট মেরিজ ক্যাথলিক কলেজে। শিক্ষাজীবনের খরচ চালাতে তাঁকে ছোটবেলায় খবরের কাগজ বিক্রি করতে হয়েছে, কাজ করতে হয়েছে রেস্তোরাঁয়। পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৮৪ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজনীতিতে তাঁর আত্মপ্রকাশ ১৯৯৬ সালে, গ্রেইন্ডলার আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। প্রথম বক্তৃতায়ই তিনি বলেছিলেন, তিনি শুধু নিজের এলাকার নয়, দেশের সব শ্রমজীবী মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন। এরপর থেকে তাঁর কর্মযাত্রা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে গেছে।
অ্যালবানিজ সামাজিক পরিবর্তনের পক্ষে। সমকামী দম্পতিদের অবসর সুবিধা নিশ্চিতকরণ, প্রতিবন্ধীদের জন্য জাতীয় বীমা প্রকল্প চালু এবং দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার অস্ট্রেলিয়া’ প্রতিষ্ঠাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
২০২২ সালের ২৩ মে অস্ট্রেলিয়ার ৩১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অ্যালবানিজ। তাঁর সরকার এখন জলবায়ু পরিবর্তন, জীবনমান উন্নয়ন ও আদিবাসী অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ব্যক্তিজীবনেও এসেছে বড় পরিবর্তন। ২০১৯ সালে দীর্ঘ ১৯ বছরের বৈবাহিক জীবনের ইতি টানার পর ২০২০ সালে জোডি হেডেনের সঙ্গে পরিচয় ও প্রেম। ভালোবাসা দিবসে তাঁদের বাগদানও হয়, যা ইতিহাসে ক্ষমতাসীন কোনো অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বাগদান ঘোষণা।
বাবার অনুপস্থিতিতে বেড়ে ওঠা অ্যালবানিজ পরিণত বয়সে খুঁজে পান তাঁর ইতালিয়ান বাবাকে, যা তাঁর জীবনের মানসিক জগতে গভীর প্রভাব ফেলে।
সবশেষে, অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে অ্যালবানিজের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাঁর নির্বাচনী এলাকার আশপাশে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। ২০২২ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টির বিজয়ের সময় যেমন বাংলাদেশিদের মধ্যে আনন্দ ছিল, এবারের নির্বাচনেও তাঁরা সক্রিয়ভাবে অ্যালবানিজের পক্ষে কাজ করছেন।