তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংকার বাস্টার মিসাইল হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলার অনুমোদন দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন ইরানের সম্ভাব্য পাল্টা প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে ওয়াশিংটন। ব্রিটিশ প্রভাবশালী দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ইরানি হামলার আশঙ্কায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও জর্ডানে মোতায়েন ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ইরানের ফোর্দো, নাটানজ ও ইসফাহানের মতো তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ছয়টি শক্তিশালী মিসাইল দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। আপাতত আর কোনো ‘ফলো-আপ’ আক্রমণের পরিকল্পনা না থাকলেও, ইরানের প্রতিশোধে যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে।
ট্রাম্প এক সামাজিক মাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরান শান্ত না হলে আরও কঠোর হামলা চালানো হবে। এদিকে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে আইনি প্রক্রিয়া চালু করার কথাও জানিয়েছে।
ইরান যেসবভাবে জবাব দিতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২০টিরও বেশি ঘাঁটি ইরানের মিসাইল রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়ার ঘাঁটিগুলো প্রাথমিক লক্ষ্য হতে পারে। এছাড়া মার্কিন দূতাবাস, কনস্যুলেট, তেল ও গ্যাস স্থাপনাগুলোও ইরানের টার্গেট হতে পারে। সৌদির আবকাইক তেল শোধনাগার, ফুজাইরাহ বন্দরের ট্যাংকারসহ উপসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত স্থাপনাগুলো বিপদের মুখে পড়তে পারে।
হরমুজ প্রণালী বন্ধ করাও হতে পারে ইরানের কৌশলগত চমক। কারণ এই পথ দিয়েই বিশ্বের প্রায় ২০% তেল সরবরাহ হয়। তবে এটি বাস্তবায়ন করলে ইরান আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়বে, বিশেষ করে চীনের মতো প্রধান তেল ক্রেতাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়বে। ইরান তার চিরাচরিত পন্থা অনুসরণ করে প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকেও কাজে লাগাতে পারে—যেমন হিজবুল্লাহ, হামাস, হুথি বা কাতাইব হিজবুল্লাহ। তবে ইসরায়েলের চলমান অভিযানে এই গোষ্ঠীগুলো আগের মতো সক্রিয় অবস্থানে নেই, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কিছুটা স্বস্তির।
অন্যদিকে সাইবার হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় ধরনের সাইবার হামলার মতো সক্ষমতা এই মুহূর্তে ইরানের নেই। মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এরই মধ্যে সাইবার প্রতিরক্ষায় সজাগ রয়েছে এবং হ্যাকার গোষ্ঠী CyberAv3ngers ধরিয়ে দিতে ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
সব মিলিয়ে, ইরান এখন চাপে থাকলেও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভিন্ন সম্ভাব্য কৌশল নিয়ে। তবে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ইরানের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে, তাই তারা সীমিত প্রতিক্রিয়ার পথ বেছে নিতে পারে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।