উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রাকৃতিক বিস্ময় জায়ান্টস কজওয়ে এখন পরিবেশগত হুমকির মুখে। ইউনেস্কো স্বীকৃত এই অনন্য ভূতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রতিবছর লক্ষাধিক পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে। কিন্তু পর্যটকদের অসচেতন আচরণ—বিশেষ করে ব্যাসল্ট পাথরের স্তম্ভগুলোর ফাঁকে মুদ্রা গুঁজে দেওয়া—এই ঐতিহাসিক সৌন্দর্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে।
প্রায় ৬ কোটি বছর আগে আগ্নেয়গিরির লাভা ঠাণ্ডা হয়ে জমাট বাঁধার মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল এই স্তম্ভগুলো। প্রায় ৪০ হাজার ষড়ভুজাকার স্তম্ভ এমন নিখুঁতভাবে স্থাপিত যে একে প্রাকৃতিক না ভেবে অনেকেই মানুষের তৈরি বলে ভুল করেন। কিন্তু এসব পাথরের ফাঁকে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া মুদ্রা এখন অভ্যন্তরীণ গঠন দুর্বল করে ফেলছে। মুদ্রায় থাকা ধাতব উপাদান—তামা, লোহা ও নিকেল—বৃষ্টির পানিতে মরিচা ধরে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পাথরে ফাটল তৈরি করছে। দীর্ঘ সময় এভাবে চললে পুরো স্তম্ভ ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু গঠনগত ক্ষতিই নয়, মরিচা থেকে সৃষ্ট লালচে দাগ স্তম্ভগুলোর স্বাভাবিক সৌন্দর্যও নষ্ট করছে।
ন্যাশনাল ট্রাস্ট এ বিষয়ে পর্যটকদের সচেতন করতে ক্যাম্পেইন চালু করেছে। তারা ‘লিভ নো ট্রেস’ নীতির ওপর জোর দিচ্ছে—অর্থাৎ প্রকৃতি উপভোগ করো, কিন্তু পেছনে কোনো চিহ্ন রেখো না। এই ধরনের আচরণ একসময় প্যারিসের ‘লাভ লক’ ব্রিজেও দেখা গিয়েছিল। ২০১৪ সালে অতিরিক্ত তালার ওজনে সেতুর অংশ ভেঙে পড়ার পর সেখানেও তালা লাগানো নিষিদ্ধ করা হয়।
জায়ান্টস কজওয়ে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এটি পৃথিবীর ইতিহাসের পাথরে লেখা এক মহাকাব্য। ভাগ্য ফেরানোর আশায় যেভাবে মুদ্রা ফেলে যাওয়া হচ্ছে, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক অমূল্য ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।
স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তোলা যায়, গল্প বলা যায়, কিন্তু প্রকৃতির হৃদয়ে আর কোনো ছিদ্র নয়। সময় এসেছে প্রকৃতি ও ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে সবাই মিলে এই নিদর্শন রক্ষায় এগিয়ে আসার।