পর্তুগালের কেন্দ্র-ডানপন্থী সরকার ঘোষণা করেছে যে, খুব শিগগিরই ১৮ হাজার অভিবাসীকে দেশ ছাড়ার নোটিশ পাঠানো হবে। প্রথম দফায়, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নথিবিহীন অভিবাসীকে আগামী সপ্তাহ থেকে ২০ দিনের মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনা দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ থেকে, আগামী ১৮ মে অনুষ্ঠিতব্য আগাম জাতীয় নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন করা হবে। এ ঘোষণাটি ৩ মে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রেসিডেন্সির মন্ত্রী আন্তোনিও লেইতাও আমারো।
আমারো পর্তুগালের বর্তমান বহিষ্কার নীতির দুর্বলতা তুলে ধরেছেন, এবং জানিয়েছেন যে, এই ব্যবস্থা কার্যকর নয়। তিনি দাবি করেছেন যে, ইউরোপের তিনটি দেশে বহিষ্কারের হার সবচেয়ে কম, এবং পর্তুগাল তাদের একটি। এমনকি নিরাপত্তা সম্পর্কিত কারণে দেশটিতে বহিষ্কারের সংখ্যা খুবই কম। তার মতে, পর্তুগালের বহিষ্কার ব্যবস্থা পুনরায় পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
এ ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে যখন পর্তুগাল রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের মার্চে, প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেগ্রো তার সংখ্যালঘু সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে পদত্যাগ করেন এবং এই পরিস্থিতিতে আগাম নির্বাচনের ডাক দেন। মন্টেগ্রোর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে, তারা একটি জুয়ার কোম্পানি থেকে অর্থ নিয়েছিল, যা সরকার কর্তৃক ছাড় পেয়েছিল। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ ওঠে, যার ফলে মন্টেগ্রোর সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
মন্টেগ্রোর নেতৃত্বাধীন দুই-দলীয় জোটটি মাত্র ৮০টি আসন নিয়ে ২৩০ আসনের সংসদে সংখ্যালঘু হিসেবে টিকে ছিল। এর পর, বিরোধী দলগুলো—কেন্দ্র-বামপন্থী সমাজতান্ত্রিক দল এবং অতি-ডানপন্থী চেগা পার্টির নেতৃত্বে—একত্র হয়ে আস্থা ভোটে সরকারের পতন ঘটায়। বর্তমানে, পর্তুগাল রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে, এবং এর জন্য বিভিন্ন বিশ্লেষকরা এটিকে গণতান্ত্রিক পর্তুগালের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
এই রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে, পর্তুগাল ২২ বিলিয়ন ইউরোর উন্নয়ন তহবিলের অর্থ সঠিকভাবে বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ১৯৭৪ সালের কার্নেশন বিপ্লবের পর থেকে এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল রাজনৈতিক টানাপোড়েন কখনও দেখা যায়নি। এছাড়া, নির্বাচনের আগে অতি-ডানপন্থী চেগা পার্টির তৃতীয় স্থান অধিকার করার ঘটনা দেশের মধ্যে ইউরোপীয় জনতাবাদী আন্দোলনের উত্থানকে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করছে। এমন পরিস্থিতিতে, বহিষ্কারের এই ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে কৌশলী ও বিতর্কিত বলে মনে করছেন অনেকেই।