সিরিয়ার পশ্চিম দারা প্রদেশে ফের ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকালে সংঘটিত এই হামলায় কেঁপে ওঠে ইয়ারমুক ব্যাসিন অঞ্চল, যা জর্ডান সীমান্ত ও ইসরায়েল-অধিকৃত গোলান মালভূমির খুব কাছাকাছি। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (SOHR) – দুই সূত্রেই এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সিরিয়া থেকে ছোড়া দুটি রকেট ইসরায়েলের খোলা এলাকায় আছড়ে পড়ে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও, এর পাল্টা জবাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ইসরায়েল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, সিরিয়ার ভেতর থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলার জন্য দায়ী থাকবেন দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। তিনি আরও দাবি করেন, সিরিয়া যেন তাদের ভূখণ্ড থেকে কোনও আক্রমণ পরিচালনার সুযোগ না দেয়, সে ব্যাপারে স্পষ্ট বার্তা দিতেই এই সামরিক পদক্ষেপ।
ইসরায়েলি কামানের গোলায় দারার বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে ধ্বংসযজ্ঞ নেমে আসে। SOHR জানায়, তিনটি কামানের গোলা ওই অঞ্চলে পড়ার পরপরই ইসরায়েলি ড্রোন চক্কর দিতে দেখা যায়। স্থানীয় সূত্রের বরাতে সানা জানায়, এই হামলায় “ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি” হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট হতাহতের সংখ্যা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এমন হামলা চালাচ্ছে যেন গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করা যায়। তাদের দাবি, এটি শুধু একক হামলা নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ইসরায়েলি আগ্রাসনের অংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ার রাজনৈতিক চিত্র বদলে যায়। বিদ্রোহী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আহমেদ আল-শারা বাশার আল-আসাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন। এরপর থেকেই সিরিয়ার ভেতরে ইসরায়েলি হামলার মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।
সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ২০২৫ সালজুড়ে ইসরায়েল মোট ৫৬টি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি ছিল বিমান হামলা ও ৯টি স্থল হামলা। এসব অভিযানে ধ্বংস হয়েছে ৮২টি লক্ষ্যবস্তু— যার মধ্যে রয়েছে অস্ত্র গুদাম, সামরিক যান, কমান্ড সেন্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা।
গত মাসেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দামেস্কের প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের কাছে বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেন, “দামেস্কের দক্ষিণাঞ্চলে কোনও প্রতিরোধ বাহিনী বা সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ঘাঁটি গড়তে দেওয়া হবে না।”
সিরিয়া-ইসরায়েল সীমান্তে ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মহল পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেও এখনো কোনও পক্ষই সরাসরি সংঘাতে জড়ানোর ইঙ্গিত দেয়নি। তবে যেভাবে প্রতিনিয়ত গোলাবর্ষণ ও পাল্টা হামলা চলছে, তাতে বড় ধরনের সংঘর্ষের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।