ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক উত্তেজনা ফের চরমে উঠেছে। সর্বশেষ, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ওয়াশিংটনের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের স্বার্থ রক্ষার জন্য অপরিহার্য। বুধবার (৪ জুন) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে খামেনি বলেন, “ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল চাবিকাঠি। শত্রুরা এটাকেই লক্ষ্যবস্তু করেছে, কারণ এটি আমাদের আত্মনির্ভরতার প্রতীক।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশের স্বার্থের ১০০% পরিপন্থী এই মার্কিন প্রস্তাব। তারা আমাদের কী করা উচিত সেটা ঠিক করে দেবে, এই অধিকার তাদের কে দিয়েছে?”
ওমানের মধ্যস্থতায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে যে পারমাণবিক আলোচনা চলছে, তাতে দৃশ্যত অগ্রগতি খুবই সীমিত। কারণ, তেহরান বারবার বলছে তারা তাদের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখবে এবং এটি কোনোভাবেই ত্যাগ করবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতির আওতায় জানুয়ারি থেকে ইরানের ওপর ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক অবরোধ ও সামরিক হুমকি অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে ইরানের অর্থনীতি চরম সংকটে পড়েছে। দেশটি জ্বালানি ও পানির ঘাটতি, মুদ্রার ধস এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বসহ নানা অভ্যন্তরীণ সঙ্কটে ভুগছে।
তবে এসব চাপের মধ্যেও ইরান দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। তারা দাবি করেছে, পারমাণবিক প্রযুক্তির ব্যবহার শান্তিপূর্ণ এবং ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না—এমন অভিযোগ তারা সবসময়ই অস্বীকার করে আসছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল খোলাখুলিভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে আসা এবং নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ফলে ইরান আগের চেয়ে আরও উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। এই অবস্থানে তেহরানের অনড় অবস্থান ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় সংঘাতের জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, কূটনৈতিক আলোচনা উত্তেজনার পথ বদলাতে পারে কি না।