ভারতে বিতর্কিত ওয়াক্ফ আইন সংশোধনকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। সহিংসতা, গুলিবিদ্ধ যুবক, গণগ্রেপ্তার আর ঘরছাড়া অসংখ্য মানুষ—সব মিলিয়ে অস্থির সময় পার করছে রাজ্যের এই অংশ।
সাম্প্রতিক এই আইনি সংস্কারে মুসলিমদের ধর্মীয় সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্বে থাকা ওয়াক্ফ বোর্ডে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতিনিধি রাখার বিধান করা হয়েছে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন মুসলিমরা। তাঁদের আশঙ্কা, এটি তাঁদের জমি-সম্পত্তি দখলের একটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের সূচনা।
এই ইস্যু ঘিরেই গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল। সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিনজন, যার মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত একজন। দুষ্কৃতিদের তাণ্ডবে পুড়েছে বহু ঘরবাড়ি ও দোকানপাট, ঘটেছে লুটপাট। ধ্বংসের শিকার হয়েছেন নিরীহ সাধারণ মানুষ।
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে উত্তপ্ত এলাকা ধুলিয়ানে বিএসএফকে লক্ষ্য করে ছোড়া ইটপাটকেলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। পাল্টা গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন সামশের নাকাব নামের এক যুবক। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনী। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ‘রোড মার্চ’। রাজ্যের ডিজিপিও নেমে পড়েছেন মাঠে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে। তবুও আতঙ্ক কাটেনি জনমনে।
শমসেরগঞ্জে জারি করা হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬৩ ধারা। এক সপ্তাহ ধরে অচলাবস্থা, বন্ধ দোকানপাট, লোকজনের ঘরবন্দি অবস্থান স্পষ্ট করছে, ভয় আর অনিশ্চয়তায় ঢেকে গেছে এই জনপদ।
একের পর এক গ্রেপ্তার আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে ধুলিয়ান ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অনেকে। ফেরিঘাট পার হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী মালদার কালিয়াচকের একটি স্কুলে। সেখানেই চলছে ত্রাণ কার্যক্রম।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দোষারোপের পালা শুরু হয়েছে। বিজেপি সংসদ সদস্যরা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ও ‘আফস্পা’র দাবি তুলেছেন। আবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে রাজ্য পুলিশের ‘দক্ষ পদক্ষেপ’-এর প্রশংসা করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে ওয়াক্ফ আইন সংশোধন ঘিরে ভারতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্কের ঝড়, যার আঁচে পশ্চিমবঙ্গের জনজীবন অস্থির, আতঙ্কিত।