সাম্প্রতিক চীন সফরে আলোচনার ঝড় তোলা এক মন্তব্য করেছেন ড. ইউনূস। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য—যেগুলো ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত—তাদের ‘ল্যান্ড লকড’ বা স্থলবেষ্টিত অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “এই অঞ্চল সমুদ্রে প্রবেশের সরাসরি কোনো পথ পায় না। আর এ দিক দিয়ে বঙ্গোপসাগরের ‘গার্ডিয়ান’ হচ্ছে বাংলাদেশ।”
এই বক্তব্য কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন তোলে। বিষয়টি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কৌশলের জন্য সংবেদনশীল হওয়ায়, মন্তব্যটি নড়াচড়া ফেলে দেয় দিল্লির নীতিনির্ধারক মহলে। তার পরপরই মোদি সরকার উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পাশাপাশি অঞ্চলটিকে অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল করার উদ্যোগ নেয়।
বাংলাদেশে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক বিনিয়োগ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই, ভারতও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয় উত্তর-পূর্ব বিনিয়োগ সম্মেলন, যেখানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন:
“উত্তর-পূর্ব অঞ্চলটি ভারতের ‘প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার’ নীতির পাশাপাশি ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ এবং বিমসটেকের মতো কৌশলগত উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই অঞ্চল আমাদের পাঁচটি প্রতিবেশীর সঙ্গে স্থল সীমান্ত ভাগ করে নেয়। ভারতের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের মূল সংযোগস্থল এখানেই।”
চীনের অর্থনৈতিক আগ্রহ এবং বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থানকে সামনে রেখে ড. ইউনূসের বক্তব্যে যে সম্ভাবনার ইঙ্গিত ছিল—তা ভারতীয় মহলে উদ্বেগের জন্ম দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্ধিত সম্পর্ক কিংবা বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের প্রাধান্য ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ওপর রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এরই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগ সম্মেলনের ঠিক পরপরই ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেয়। অনেকের মতে, এটি সরাসরি কূটনৈতিক বার্তা।
তবে বাংলাদেশও এবার চুপ থাকেনি। বরং এই ঘটনাকে কৌশলগত একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে ঢাকা। তাৎক্ষণিকভাবে ভারত থেকে সুতাসহ বেশ কিছু আমদানি পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্বনির্ভরতা বাড়াতে হযরত শাহজালাল ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো এবং ট্রানজিট সুবিধা সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
ড. ইউনূসের মন্তব্যের তাৎপর্য ও রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘিরে এখন আঞ্চলিক কূটনীতি নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।