যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে এবার গুরুতর পদক্ষেপ নিয়েছে বেইজিং। চীন ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে চুম্বক ও বিরল খনিজ পদার্থ রপ্তানি আপাতত বন্ধ রাখবে। এরই মধ্যে দেশটির বিভিন্ন বন্দরে এসব পণ্যের চালান পাঠানো স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটনের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিরল খনিজ ও চুম্বক আমদানিকারক দেশ, যার প্রায় পুরো চাহিদাই পূরণ করে চীন। গত ৪ এপ্রিল চীন নতুন একটি নীতিমালা কার্যকর করে, যার আওতায় ছয়টি বিরল ভারী ক্ষার মৃত্তিকা এবং গুরুত্বপূর্ণ চুম্বক রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এসব খনিজ শুধুমাত্র চীনেই পরিশোধন করা সম্ভব, আর বিশ্বে ব্যবহৃত বিরল চুম্বকের প্রায় ৯০ শতাংশই উৎপন্ন হয় চীনে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে চীনের এসব খনিজ ও চুম্বক এখন থেকে কেবলমাত্র বিশেষ রপ্তানি লাইসেন্স থাকলে অন্য দেশে পাঠানো যাবে। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ এখনও সেই লাইসেন্স দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেনি, ফলে কার্যত রপ্তানি পুরোপুরি থেমে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প খাতকে বড় ধরনের চাপে ফেলবে। কারণ এই বিরল খনিজ পদার্থগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক যানবাহন, মহাকাশযান, সেমিকন্ডাক্টর চিপ এবং সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে। অন্যদিকে, বিরল চুম্বক ছাড়া ড্রোন, রোবটিকস কিংবা ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
চীনের এই কৌশলকে অনেকে বাণিজ্য যুদ্ধে একটি জবাব হিসেবেই দেখছেন, যেখানে শুল্ক আরোপের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এটি গ্রহণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং পুরো বিশ্বের প্রযুক্তি খাতের ওপর একটি চাপ তৈরি করতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন প্রশ্ন হলো—যুক্তরাষ্ট্র কি বিকল্প উৎস খুঁজে পাবে, নাকি বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের ভাঙন দেখা দেবে?